‘অভিযান আই-ওয়াশ কিনা দেখেন, অপেক্ষা করেন’

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-24 21:15:38

দেশব্যাপী চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে যারা ‘আই-ওয়াশ’ বলছেন তাদের সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অভিযান নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে ‘আই-ওয়াশ’ করতে যাব কিসের জন্য? আমি তো আপন-পর কোনো কিছু দেখিনি। অপরাধের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, সে যেই হোক না কেন তাকেই আমরা ধরেছি। এটাকে ‘আই-ওয়াশ’ বলে কী করে? ওসব ‘আই-ওয়াশ’ এর ব্যবসা বিএনপি ভালো জানে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজারবাইজানে ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে এদিন সংবাদ সম্মেলনে আসেন সরকারপ্রধান।


সংবাদ সম্মেলনের জন্য দুপুর আড়াইটা থেকে গণভবনে আসতে শুরু করেন সাংবাদিক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। বিকেল ৪টা ৭ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন স্থলে এসে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এরপরই শুরু হয় প্রশ্নোত্তরপর্ব।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে যারা ‘আই-ওয়াশ’ বলে খাটো করে সমালোচনা করছে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাকে তারা আই-ওয়াশ বলে যাচ্ছে। ঠিক আছে—দেখেন, অপেক্ষা করেন, আই-ওয়াশ নাকি তা দেখা যাবে।

বিএনপির হাত দিয়ে দেশে দুর্নীতির আমদানি হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশটাতে দুর্নীতি নিয়ে আসা—এটা তো বিএনপিরই করা।


তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান এসে এ দেশে মানিলন্ডারিং থেকে শুরু করে ঋণখেলাপি কালচার—এর সবই তো শুরু করে গেছে। আমাদের যুবসমাজ, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র-অর্থ তুলে দিয়ে তাদের বিপথে নিয়ে যাওয়া, তাদের সন্ত্রাসী বানানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি—এগুলি তো জিয়াউর রহমান করে গেছে। তার পরবর্তীতে যিনি এসেছেন এরশাদ সাহেব তিনি আরও এক ধাপ উপরে। তারপরে যখন খালেদা জিয়া আসলো, সে তো একেবারে দোকান খুলে বসলো! এদিকে হাওয়া ভবন ওদিকে প্রাইম মিনিস্টারের অফিসে উন্নয়নের উইং। উন্নয়ন মানে হলো ঘুষ খাওয়ার উইং। অন্তত আমরা সরকারে আসার পরে এ সমস্ত হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, মূল যারা দুর্নীতিবাজ, তার দুইটা তো শাস্তি পেয়েই গেছে, খালেদা জিয়া আর তার ছেলে—এ দুইটা তো আগেই শাস্তি পেয়ে গেছে। তাদের আরো কিছু খুচরা নেতা আছে, তাদেরও অনেক দুর্নীতি, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন—বহু অপরাধে তারা অপরাধী। পর্যায়ক্রমে সবগুলোই শাস্তি পাবে। সাজা তাদেরও পেতে হবে। তাদের অপেক্ষা করতে হবে কিন্তু পাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।


সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ফলে সৃষ্ট কিছু সমস্যা নিয়েও কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিচার বিভাগে স্বাধীনতার নামে মামলার জট একটু বেড়ে গেছে। মামলা কোর্টে বেশি চলে আসছে। আগে তো কিছু কিছু মামলা ম্যাজিস্ট্রেসি কোর্টে চলে যেত, ওখান থেকেই শেষ হয়ে যেত। এখন সবই নিতে গিয়ে সামালও দিতে পারছে না, ছাড়তেও পারছে না। তবুও এটা যে—শাস্তি (নুসরাত হত্যাকান্ড) একটা হলো, সেটা দৃষ্টান্ত।

নুসরাতকে ‘অত্যন্ত সাহসী’ মেয়ে অভিহিত করে সরকারপ্রধান বলেন, মেয়েটা জীবন দিয়ে গেছে কিন্তু একটা সাহসী ভূমিকা রেখে গেছে। শেষ পর্যন্ত সে কিছুতেই নত হয় নাই। আরেকটা মেয়ে, যে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ছিল সে কী করে এত নৃশংস কাজ করতে পারে, সহযোগিতা করতে পারে, গায়ে পেট্রোল ঢালা-আগুন দেওয়া—এ সমস্ত কাজ কী করে করতে পারে জানি না। মানুষের মনুষত্ববোধ বলে কিছু নাই, এগুলোর শাস্তি হওয়া দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ক্রিকেটারদের ধর্মঘট, ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কর্মকাণ্ড, কলকাতা টেস্টে উপস্থিত থাকার জন্য বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির আমন্ত্রণ—এসব প্রসঙ্গেই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।


তিনি বলেন, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবের কথাটা সাকিব আইসিসিকে না জানিয়ে ভুল করেছে। সে ভুল স্বীকার করেছে। আইসিসি যদি সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়, সেখানে আমাদের খুব বেশি করণীয় থাকে না। সে যেহেতু আমাদের দেশের ছেলে, সারাবিশ্বের ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে তার আলাদা অবস্থান আছে। সে ভুল করেছে। বিসিবি বলেছে, তার পাশে থাকবে। যা করার বিসিবি করবে। এখানে আমাদের খুব বেশি করণীয় রয়েছে, এমন কিন্তু নয়।

এদিকে একমাসেরও বেশি সময় ধরে পেঁয়াজের বাজারে আগুন। আমদানি করেও কমানো যায়নি পেঁয়াজের দাম। এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের সিন্ডিকেট নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ সময় অবশ্য তিনি রসিকতা করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন— পেঁয়াজ না খেলে কী হয়?

বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দুই-চার দিনের মধ্যে দাম কমে যাবে। বাজার সহনীয় করতে ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।


দেশের সম্পদ গুটিকয়েক পরিবারের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখুন একটা দেশের যখন উন্নতি হয়, এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই কিছু লোক একটু বেশি অর্থশালী হয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটা নীতিমালা, প্রত্যেকটা প্রকল্প, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে যত পরিকল্পনা আমরা নিচ্ছি—সমস্ত পরিকল্পনাগুলি একেবারে গ্রামের মানুষ, সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে, তাদের সামাজিক উন্নতির বিষয়টা মাথায় রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনাটা নিচ্ছি। পরিকল্পনা নিচ্ছি বলেই আজকে দারিদ্র্য বিমোচন দ্রুত হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি আমরা কমিয়ে রাখতে পেরেছি। যার শুভ ফলটা কিন্তু দেশের মানুষ পাচ্ছে। তবে স্বাভাবিকভাবে কিছু লোক যখন ব্যবসা-বাণিজ্য করে তখন অনেক বেশি ধনাঢ্য হয়ে পড়ে, যা সব দেশেই হয়ে থাকে—এটা নিয়ে চিন্তা বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। একেবারে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করে ফেলবে সেটা কিন্তু এ দেশে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী কখনো মুচকি হাসিতে, কখনো কৌতুক করে আবার কখনো সাংবাদিকদের তীর্যক প্রশ্নের উত্তরে, কৌশলী ভূমিকায় আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি ছড়িয়ে সাম্প্রতিক আরও কিছু ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। বিকেল সোয়া পাঁচটায় ঘণ্টার অধিক দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনের ইতি টানেন অতিথিদের চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর