আন্দোলনে নামছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা | 2023-09-01 03:51:31

মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ১১ দফা দাবিতে ফের আন্দোলনে নামছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। শ্রমিক আন্দোলনের ফলে লোকসানে থাকা পাটকলগুলোর লোকসান আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে বিজেএমসি।

শুক্রবার (১ অক্টোবর) খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে জনসভার মধ্য দিয়ে আন্দোলন শুরু করবে শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

পাটকল শ্রমিকরা জানান, ২০১৫ সালে পাটকল শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু এরপরে ৪টি বছর কেটে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি মজুরি কমিশন। প্রতিবারই আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন থেকে শ্রমিকদের বিরত রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ এ বছরের ২ এপ্রিল আন্দোলনে নেমেছিল শ্রমিকরা। লাগাতার ১৬ দিনের আন্দোলনে ১৬ কোটি টাকার পাটপণ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। ১৬ দিন পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজেএমসির চেয়ারম্যানের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে শ্রমিকরা। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়িত হয়নি মজুরি কমিশন।

বর্তমানে এ অঞ্চলের পাটকলগুলোতে শ্রমিকদের ৯ মাসের মজুরির ৩৬ কোটি টাকা ও কর্মচারীদের ৪ মাসের বেতন ৪ কোটি টাকার মতো বকেয়া আছে।

আন্দোলনে নামছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা
বেতনের দাবিতে কাল থেকেই আন্দোলনে নামছেন শ্রমিকরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

শ্রমিকদের চলতি পাওনার পাশাপাশি ২০১৩-১৪ অর্থ বছর থেকে অবসরে যাওয়া শ্রমিক, কর্মচারীদের পাওনা পিএফ-গ্রাচ্যুইটির টাকাও পরিশোধ করেনি বিজেএমসি। এমতাবস্থায় ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামছে শ্রমিকরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ শ্রমিকলীগ খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম কে বলেন, ‘২০১৫ সালের শ্রমিকদের অনুকূলে নতুন মজুরি স্কেলে পে-স্লিপ প্রদান করার নির্দেশনা থাকার সত্ত্বেও এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। জাতীয় মজুরি স্কেল বাস্তবায়নে নানান গড়িমসির মাধ্যমে বিলম্বিত করা হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।'

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে জাতীয় মজুরি স্কেল ২০১০ অনুযায়ী শ্রমিকেরা যে মজুরি পাচ্ছে তা দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব না। এছাড়া কর্মচারীদের ৪ মাসের বেতন, শ্রমিকদের ৯ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে।'

বিজেএমসির খুলনার সমন্বয়ক মো. বনিজ উদ্দিন মিয়া জানান, শ্রমিকদের মজুরি ও বকেয়ার বিষয়ে বিজেএমসিকে অবহিত করা হয়েছে। মিলে আর্থিক সংকটের কারণে পাটক্রয় করা যাচ্ছে না। একই সাথে মজুরি বকেয়া পড়ছে। ৯টি পাটকলে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার উৎপাদিত পাটপণ্য মজুদ রয়েছে।'

এদিকে, পাটকলগুলোতে ২১ হাজার শ্রমিকের স্থানে কাজ জুটছে মাত্র ১১ হাজার ২৫২ জন শ্রমিকের। আর ৩ হাজার ১১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৩৫জন। তারপরও শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কারোরই মজুরি ও বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে মোট চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ পাট কিনেছে পাটকল কর্তৃপক্ষ। ফলে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়, কমেছে পণ্য উৎপাদন। বর্তমানে প্রায় ২৫০ কোটি টাকারও বেশি পাটপণ্য অবিক্রীত অবস্থায় পাটকলগুলোতে পড়ে রয়েছে। এসব পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক সংকটে পড়েছে পাটকলগুলো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর