এক বছর পর আইনি সংস্কারে উদ্যোগী ইসি

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 14:15:51

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘তুলে রাখা’ আইনি সংস্কার নিয়ে ফের উদ্যোগী হয়েছে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেল বছর নির্বাচনী আইন ১৯৭২ সালের গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও ১৯৭৬ সালের সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশের যুগোপযোগী সংস্কারের কথা ছিল।

এক বছর পর বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) কমিশনের ৫৩তম সভায় আরপিও’র প্রস্তাবিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত ও সীমানা আইনের খসড়া পুনর্বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হয়। তবে আইন দুটি সংশোধনের খসড়া আরও বিচার বিশ্লেষণের জন্য আইন সংস্কার কমিটিতে ফেরত পাঠিয়েছে ইসি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ইসির কর্মকর্তারা জানান, সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়া কমিশন থেকে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। ওই আইনটি কিছু পর্যবেক্ষণের পর ইসিতে ফেরত পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। কমিশন সভায় ওই আইন নিয়ে আবারও আলোচনা করে ভাষা সহজীকরণ করতে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন সংস্কার কমিটির কাছে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়া গণ-প্রতিনিধিত্ব আইনের খসড়াও ওই কমিটিতে পাঠানো হয়।

সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানান, আজকের কমিশন সভায় দুইটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরপিও সংশোধন ও সীমানা পুনর্বিবেচনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। আর সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। পরবর্তী কমিশন সভায় আলোচনা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘সীমানা পুনর্বিবেচনার বিষয়টি ইসির আইন সংস্কার কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় আমাদের পাঠানো প্রস্তাবনায় কিছু বিষয় আরও স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছে। সেগুলো স্পষ্টভাবে উপস্থাপনার জন্য আইন সংস্কার কমিটি কাজ করবে।’

আরপিও সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে আরপিও সংশোধনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সেটি আমরা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। এখানে শুধুমাত্র ইভিএম’র বিষয়টি যুক্ত হবে। আর এটি বাংলায় রুপান্তর করা হবে। এর বাইরে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। আশা করছি আরেকটি বৈঠক করে যাচাই-বাছাই শেষে আমরা এটি চূড়ান্ত করতে পারব।’

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ধারা যোগ করতে নির্বাচন কমিশন গত বছরের ৩০ আগস্ট আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে আরপিও (সংশোধন) আইন, ২০১৮-এর অধ্যাদেশে সই করেন। পরে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত গেজেট জারি করে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপে আরপিও, সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ আইনি সংস্কারের কথা জানিয়েছিল ইসি। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করা হয়। সেসময় আরপিও ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশের যুগোপযোগী সংস্কারের কথা জানায় ইসি। এ দুটি বিষয়ে আইনি পরামর্শকও নিয়োগ করা হয়।

পরে গত বছরের মার্চে সংলাপ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলোর পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইন করতে না পারায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয় বিদ্যমান অধ্যাদেশ দিয়ে। 

এদিকে কমিশন সভায় উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোটের সিদ্ধান্ত হয়। তবে কোনো তফসিল চূড়ান্ত করা হয়নি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ নির্বাচনের ভোটার তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে কমিশন সভায় ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনার আগেই তা মুলতবি করা হয়। আগামী রোববার (৩ নভেম্বর) আবারও সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

এরআগে বেলা ১১টায় নির্ধারিত সভার সময় পরিবর্তন করে বিকেল ৩টায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ৫৩তম সভা শুরু হয়। এতে নির্বাচন চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর, অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সংশোধনী এসেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত বেশ কিছু বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। ২০০৭ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এটিএম শামসুল হুদার ইসি সংলাপ করে ব্যাপক আইনি সংস্কার করে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (অধ্যাদেশ) (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল পাস হয়। এতে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা করা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করাসহ কিছু সংশোধন এসেছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর