সৌদি থেকে মৃত দেহ আনার প্রক্রিয়া জটিল, প্রয়োজন সচেতনতা!

, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 13:02:03

সৌদি আরব(মক্কা) থেকে: সুন্দরভাবে ওমরাহ পালন শেষে অপার পার্থিব আনন্দ নিয়ে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছেন। জেদ্দায় বিমান বন্দর থেকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে উড়োজাহাজে আরোহন করবেন, সেই মুহূর্তে জীবনের আয়ু ফুরিয়ে এলো। আবার এমনও হয়েছে, উড়োহাজাজ ঢাকার উদ্দেশে টেক অফ করবে। সে মূহূর্তে একজন ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। তার নিথর দেহটি এখানে রেখেই যেতে হলো স্বজনদের।

হঠাৎ করে জীবনের দূয়ারে হানা দেয়া এমন শত শত মৃত্যুর ঘটনার করুণ সাক্ষী আমরা। অনাকাঙ্খিত এই মত্যু আমাদের ব্যথিত করে। তবে এটা কঠোর এক বাস্তবতা।

নিজ দপ্তরে বসে বার্তা২৪.কমকে এমনটিই বলছিলেন সৌদি আরবের জেদ্দার বাংলাদেশ মিশনের কনস্যুলর (হজ) মো. মাকসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, পবিত্র কাবা ঘরে এলে আমাদের যে কোন মূহূর্তে মৃত্যু হতে পারে তেমন মানসিক প্রস্তুতি সকলেরই নেয়া প্রয়োজন। কারণ, এই ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে যারা পড়েন, একমাত্র তারাই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারেন প্রবাসে মরদেহ নিয়ে স্বজনদের বিড়ম্বনা।

শেষ রমজানের দিকে মায়ের মৃতদেহ নিয়ে এমনই জটিল বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয় ঢাকার মোহাম্মাদপুর বাঁশবাড়ী এলাকার বাসিন্দা দাউদ হোসেনকে।

মা সাহিদাকে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে আসেন দাউদ। এক পর্যায়ে মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে নেয়া হয় কিং আব্দুল আজিজ হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার মাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সৌদির প্রচলিত নিয়ম-কানুন না জানায় বেশ বিপাকে পড়তে হয় দাউদ হোসেনকে।

তিনি জানান, এখানে হাসপাতালে মায়ের মরদেহ দেখার আগে ওরা নিশ্চিত হতে চায় প্রকৃতপক্ষে আমি তার স্বজন কি-না। আমাদের এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুতি ছিল না। তাই এদিক-সেদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয়েছে। ভাবছি যারা একেবারে গ্রাম থেকে আসেন তাদের অবস্থা তাহলে কতটা ভয়াবহ। তবে হ্যাঁ নিয়মকানুন জানলে আবার এখানে সবকিছুই সোজা। 

কারো এখানে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার মরদেহ দেশে নেয়ার প্রক্রিয়াটাও বেশ জটিল। বিশেষ করে হজে এসে মারা গেলে মরদেহ দেশে নিতে সময় লাগে তিন থেকে চার মাস। তার চেয়ে অনেকে এখানেই দাফন করাটাকে উত্তম বলে মনে করেন। তারা এই পবিত্র ভূমিতে প্রিয় স্বজনের সমাধি হবার বিষয়টিকেও ধর্মীয় চেতনায় বেশ গর্বের বলে মনে করেন। অনেকে আবার অসিয়ত করে যান মৃত্যু হলে যাতে তার সমাধি হয় দেশে। তাদের মরদেহ দেশে পাঠানোটাই বেশ দূর্ভোগের।

কেউ এখানে মারা গেলে প্রথমত, হাসপাতাল থেকে মরদেহ ছাড়িয়ে আনতে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট মোনাজ্জেম বা মোয়াল্লেমের (হজ এজেন্ট) প্রত্যায়নপত্র।

সেটা নিয়ে স্থানীয় হজ মিশনে গেলে সেখান থেকে আরেকটি পত্র প্রদান করা হয়। এসব কাগজপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে তবেই দেবে মৃত্যুর সনদ।

তারপর মরদেহ নিতে অনাপত্তির কাগজ পেলে মরদেহ নেয়া হবে মসজিদ আল হারামে। সেখানে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ শেষেই জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে দাফনের ব্যবস্থা করে এখানকার কর্তৃপক্ষ।

মো. মাকসুদুর রহমান জানান, এই প্রক্রিয়াগুলোর সাথে অনেকের পরিচয় না থাকলে এ দপ্তর-ও দপ্তরে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে হয়রান হতে হয়। পেরেশান হতে হয়, এর মধ্যে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় অগত্য মরদেহের দাফনের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করেই ফিরে যেতে হয় অনেককে।

হজ মিশনের এই কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে হজে এসে মারা গেছেন ১৬২ জন বাংলাদেশী। এবারও ওমরাহ করতে গিয়ে সৌদি আরবে মারা গেছেন ২০ জনের মতো।

আমাদের নির্দেশনা রয়েছে, সন্মানিত কোন হাজী মারা গেলে প্রয়োজনে অফিস খুলে তার জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে তৈরি করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে মিশন অত্যন্ত আন্তরিক।

তবে অনেকেই প্রক্রিয়াগুলো সঠিক সময়ে অনুসরণ করতে পারেন না বলে মরদেহ দাফনের প্রক্রিয়া শেষ করতে ৭/৮ দিন সময় লেগে যায়।

কখনো দেখা যায়, ঢাকায় এজেন্সির সাথে সে যোগাযোগই করতে পারছেন না। আবার কোথায় কি করতে হবে সেটাও ভালোভাবে বুঝতে পারেন না। সেটাও একটা সমস্যা। তাই ওমরাহ করতে আসার আগে প্রত্যকের উচিৎ মৃত্যু নিয়ে একবার অন্তত ভাবা। কারণ কার কখন কোথায় মৃত্যু তা মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তার গাইড কে, সৌদিতে তার স্থানীয় মোনাজ্জেম কে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর প্রভৃতি বিষয়ে অবগত থাকাটা অত্যন্ত জরুরী-জানান মিশনের এই কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর