১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে 'সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮'। বেশ কিছু সংযুক্তি, পরিবর্তন ও কঠিন শাস্তির বিধান রেখে কার্যকর হওয়া এই আইনের বয়স মাত্র তিন দিন। কার্যকরের পর দুই দিন ছুটি থাকায় সড়কে পরিবহন সংখ্যায় কম ছিল। এ সময় এই আইনের প্রভাব তেমন দেখা না গেলেও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। নতুন আইনটি সবার মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে এক সপ্তাহের জন্য নমনীয় আচরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে। তবে ট্রাফিক পুলিশের এমন নমনীয় আচরণের সুযোগ নিচ্ছেন পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ বাংলা মোটর ও শাহবাগ ঘুরে দেখা যায়-স্টপেজ না মেনে গণপরিবহনে যাত্রী ওঠা-নামা, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে যানবাহন চালানো, সিট বেল্ট না বাঁধা, ট্রাফিক সিগন্যাল ও জেব্রা ক্রসিং না মেনে যত্রতত্র সড়ক পারাপারের মত ঘটনা। এছাড়া সড়ক ছেড়ে ফুটপাত ধরে বাইক চালানোর ঘটনা অহরহ দেখা যাচ্ছে। অথচ নতুন আইনে এসব এসব অপরাধে রয়েছে জরিমানার বিধান ।
মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মোটরসাইকেলে কারওয়ান বাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেলের মোড় অতিক্রম করছিলেন একজন চালক। বিষয়টি দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের নজরে এলে তাকে থামানো হয় এবং গাড়ির কাগজ-পত্র দেখাতে বলা হয়। গাড়ির কাগজ-পত্র ঠিক থাকলেও বাইক চালানো অবস্থায় কথা বলা অপরাধ। নতুন আইনে এই অপরাধের শাস্তি ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে ওই চালক ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাকে কোন জরিমানা না করেই ছেড়ে দেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ৷
বেশ কিছু যাত্রী-পথচারী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিন নতুন আইন সম্পর্কে না জানলেও এখন তারা এই আইন সম্পর্কে মোটামুটি জানেন। তবে জানলেও মানছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিহঙ্গ গাড়ির চালক রাজা মিয়া বলেন, 'আমি তো একলাই না, কাউরেই দেহি না (আইন) মানতে। এক সপ্তাহ নতুন আইনে মামলা হইব না, তাই এইডা গুরুত্ব দেই নাই।'
ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করে শুধু হাত উঁচিয়ে চলন্ত গাড়ির ফাঁক দিয়ে রাস্তা পার হওয়া এক পথচারীকে এভাবে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 'গিয়ে অফিস ধরতে হবে। এত কিছু চিন্তা করার সময় নেই।'
নতুন আইনে জরিমানার কথা উল্লেখ করলে তিনি উত্তর দেন, 'কোন দিন তো রাস্তা পারাপার হওয়ার কারণে জরিমানা করতে দেখিনি। যখন করবে তখন দেখা যাবে।'
খামারবাড়ি থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত দায়িত্বরত একাধিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, মামলা করার জন্য নতুন রশিদ বই না আসা, অনলাইনে মামলার ক্ষেত্রে পুরনো সফটওয়্যার আপডেট না করাসহ বিভিন্ন কারণে এক সপ্তাহ নতুন আইনের ক্ষেত্রে তারা নমনীয় থাকবে। এক সপ্তাহ পর নতুন নির্দেশ এলেই তারা মূলত নতুন আইনের প্রেক্ষিতে এ্যাকশনে যাবেন। এখন মূলত চালক, যাত্রী ও পথচারীদের মোটিভেট করার কাজ করছেন তারা।
এক সপ্তাহ পর ফিটনেস ও নিবন্ধনবিহীন গাড়ি, ভুয়া লাইসেন্স ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছেন কয়েকজন সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশ।