পাখির ‘বাসা ভাড়া’ বছরে ৩ লাখ টাকা

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-29 23:37:58

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের সেই আমবাগানে বাসা বাঁধা অতিথি পাখি শামুকখোলের জন্য বাৎসরিক তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ওই বরাদ্দ চাওয়া হয়।

মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে তা প্রতি বছর আমবাগানের মালিক বা ইজারাদারকে দেয়া হবে। যাতে তারা বাগান থেকে পাখি তাড়িয়ে দেওয়া ও বাসা ভাঙা থেকে বিরত থাকেন বা পাখির অবাধ বিচরণে কোনো বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি না করেন। যতদিন ইচ্ছে পাখিগুলো ওই বাগানে বাঁধা বাসায় থাকবে। আর সরকার তাদের ‘বাসাভাড়া’ বাবদ ব্যয় বহন করবে।

খোর্দ্দবাউসা গ্রামের একটি আমবাগানে শামুকখোল পাখি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ এবং জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা গ্রামের আমবাগানটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সেখানে মোট ৩৮টি গাছে শামুকখোল পাখি বাসা বেঁধেছে। ওই গাছগুলোতে বছরে কী পরিমাণ আম ধরে এবং তা না হলে কেমন ক্ষতি হবে, তা নিরূপণের চেষ্টা করেছি।

কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ আরো বলেন, মালিক পক্ষ, ইজারাদার, স্থানীয় মানুষ, আম ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষের হিসেব অনুযায়ী পাখির বাসা সেখানে থাকলে বছরে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। সে অনুযায়ী আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেই। সেটি সোমবার (১১ নভেম্বর) জেলা প্রশাসক যাচাই করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দের অনুমোদন পেলে তা বাগান মালিক ও ইজারাদারদের দেওয়া হবে।

খোর্দ্দবাউসা গ্রামের একটি আমবাগানে শামুকখোল পাখি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল, সে অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা বাগানটিতে সার্ভে করে এ হিসেব বের করেছেন। সেটি প্রতিবেদন আকারে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি, দ্রুত বরাদ্দ অনুমোদন হবে। যা ওই বাগান মালিককে দিয়ে আমরা পাখিদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

জানা যায়, বাঘার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের ওই বাগানটি গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখি এসে বাসা বাঁধে। তারা বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে আসে এবং বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়ে শীত শুরু হলে ও তাদের বাচ্চা উড়তে শিখলে চলে যায়। এবারও সেখানে কয়েক লাখ পাখি বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চা এখনও উড়তে শেখেনি।

এদিকে, পাখি বাসা বাঁধায় গত দুই বছর পাখির জন্য বাগান পরিচর্যা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আমের ফলন কম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাগান ইজারা নেওয়া আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান। তিনি গত ৩০ অক্টোবর একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙে দেন এবং সব বাসা ভেঙে গাছ খালি করতে চান। তবে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী মানুষ তাকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন।

খোর্দ্দবাউসা গ্রামের একটি আমবাগানে শামুকখোল পাখি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক বসে। সেখানে ইজারাদার আতাউর রহমান পাখিরা ১৫ দিনের মধ্যে চলে না গেলে তিনি সেগুলো তাড়িয়ে দেবেন বলে ‘আল্টিমেটাম’ দেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় আদেশ দেয়ার আরজি করেন একজন আইনজীবী। আদালত শুনানি শেষে ‘বাগানের পাখির বাসা কোনোভাবে ভাঙা যাবে না’ বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে বাগান মালিকের সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ করে, তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে নির্দেশ দেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর