ইলেকট্রিক গাড়ির যুগ কবে আসবে, কে দেবে অনুমোদন?

, জাতীয়

  সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 08:39:41

ঢাকা: কাস্টমসসহ আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া মেনে যুক্তরাজ্য থেকে পরিবেশ বান্ধব ‘বিদুৎ-চালিত টেসলা কার’ নিয়ে আসেন দেশের একজন ব্যবসায়ী। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির কাছে নিবন্ধনের জন্য। কিন্তু বিআরটিএ ইঞ্জিন ছাড়া কোন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করে না।

গত বছরের আগস্ট থেকে গাড়িটি পড়ে আছে। বিদুৎ চালিত দামি কয়েকটি গাড়ি বাংলাদেশে গত বছরের বিভিন্ন সময়ে এসেছে। রেজিস্ট্রেশনের অভাবে এগুলো কেউ চালাচ্ছেন না। সরকার বিদুৎ-চালিত গাড়ি অনুমোদন দিতে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে চলছে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রস্তুত করতে যে কমিটি করে দিয়েছে তার একজন সদস্য বাংলাদেশ রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির উপ-পরিচালক শফিকুজ্জামান ভুঁইয়া।

তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিটির প্রথম বৈঠক করেছে। কি আইন আছে আর কি কি লাগবে, এগুলো দেখা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরাও সেই কমিটিতে রয়েছেন।’

সূত্র জানায়, বছরখানেক আগে ডন এন্টরপ্রাইজের আনা একটি ইলেকট্রিক গাড়ি বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বুয়েট ও বিআরটিএ-এর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে পরবর্তী কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তা জানতে চেয়েছে।

সে কমিটির প্রধান বিআরটিএ'র পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানী। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কয়েকটি বৈঠক করা লাগবে। সেখান থেকে কি বেরিয়ে আসা তা যাচাই করা হবে। অন্যান্য দেশে কোন কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে চালাচ্ছে সেটাও আমরা দেখবো। রিচার্জ ফ্যাসিলিটি এখানে জড়িত।

পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানী বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘আগামী তিন চার মাসের আগে কিছু চূড়ান্ত করতে পারবে বলে মনে হয় না ।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়– বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো এহসান বিশেষজ্ঞ হিসেবে এ কমিটিতে রয়েছেন।

তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘ইলেক্ট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো বৈদ্যুতিক শক্তি লাগবে। এখন দেশের বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন সক্ষমতা আছে কি না সেটা আগে দেখতে হবে। কারণ গাড়িটি পুরোপুরি বিদ্যুৎ নির্ভর। কোথাও চার্জ দেবেন তারপর সেটা চলবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন তার জন্য প্রস্তুত কি না সেটা দেখতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে এরই মধ্যে কয়েক লক্ষ বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি চলছে। সরকারি ভাবে এগুলো অনুমোদিত নয়। এ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বিদুৎ চালিত গাড়ি অধ্যুষিত বড় জায়গা।

তার তথ্যমতে, শুধু ঢাকার আশপাশের জেলায় কয়েক লক্ষ এবং সারাদেশে বিদুৎচালিত গাড়ির সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ লক্ষ। এই গাড়িগুলোর একটিও সরকার অনুমোদিত না।

বৈদ্যুতিক গাড়ির অনুমোদন দিলে এই কয়েক লাখ গাড়ির অনুমোদনের ব্যাপারটি আসবে-বলে মনে করেন অধ্যাপক মো. এহসান।

বিআরটিএ তে প্রথম বৈঠকের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের দীর্ঘ মেয়াদি পলিসির জন্য এটা ভাবছেন যে গাড়িতে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার লাগবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালন দক্ষতা যদি পুরোপুরি না আসে তাহলে গাড়িতে বর্তমান জ্বালানি খরচের চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়ে যাবে।

বিশ্বে যেসব দেশ ইলেকট্রিক গাড়ি নির্ভরতার দিকে যাচ্ছে তাদের আগে বিদ্যুৎ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে তাদের সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত করেছে। তারপর ইলেক্ট্রিক গাড়ি শুরু করেছে।

তিনি বার্তা২৪.কম কে আরও বলেন, ইলেক্ট্রিক গাড়ি চালু করলে প্রতি বছর যে পরিমাণ পরিত্যাক্ত ব্যাটারি গাড়ি থেকে বের হবে এগুলো পরিবেশ বান্ধব ডিসপোজাল ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

কারণ একটি গাড়ি থেকে ৮ থেকে ১০টা ব্যাটারি বের হবে। উন্নত বিশ্বে গাড়িগুলো লিথিয়াম ব্যাটারিতে চালানো শুরু করেছে। এর স্থায়িত্ব বেশি। এজন্য বলছি, সারা বিশ্বে আস্তে আস্তে এর ব্যবহার হোক। আমাদের আগ বাড়িয়ে গিয়ে লাভ নেই।

বিশ্বে এখনও ১৫ লক্ষ ইলেকট্রিক গাড়ি আসছে। ১০ বছরে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। বাংলাদেশে কোন অনুমোদন ছাড়াই লক্ষ লক্ষ ইলেকট্রিক গাড়ি চলছে। এগুলো ইজিবাইক বা অটো নামে পরিচিত। ঢাকার অদূরে নারায়নগঞ্জের ডুমনি ও খিলক্ষেত সরেজমিনে গিয়ে কয়েক হাজার ইজিবাইক দেখা গেছে।

ঢাকার দু’ তিনটি মোটরসাইকেল কোম্পানি চীন থেকে ইলেক্ট্রিক মোটরসাইকেল নিয়ে এসে বিক্রি করছে। এগুলো চালাতে গিয়েও পুলিশের দৌঁড়ানি খেয়ে বন্ধ রেখেছেন চালকরা। দূষণমুক্ত পরিবেশ বান্ধব হলেও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় পুলিশের কাছে এগুলো অবৈধ।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর