রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের সেই আমবাগানে শামুকখোল পাখির জন্য বছরে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়া বাসা নয়, স্থায়ী আবাসন গড়ে তুলতে চায় সরকার। সেজন্য আমবাগানসহ আশপাশে ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসককে প্রস্তাব করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের আগ্রহে আগামী দুই থেকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব প্রতিবেদন আকারে পাঠাবে জেলা প্রশাসন। ফলে খোর্দ্দবাউসা গ্রামের আমবাগানের অতিথি শামুকখোল পাখি ভাড়া বাসা নয়, স্থায়ী আবাসন পেতে যাচ্ছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা সার্ভে (জরিপ) করে পাখির বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য বাৎসরিক তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা বাগান মালিককে দেওয়ার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) আমাকে ফোন করেন। তারা বাসা ভাড়া দেওয়ার বদলে স্থায়ীভাবে ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের পাল্টা প্রস্তাব দেন। আমরা জানিয়েছি, দুই থেকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রতিবেদন আকারে প্রস্তাবনা পাঠাব।'
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, 'স্থায়ী অভয়ারণ্য করা গেলে পাখিরা আর অন্য কোথাও যাবে না। তাদের কেউ বিরক্তও করবে না। এজন্য প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি, পাখিদের স্থায়ী আবাস তৈরি করে সেখানে অভয়ারণ্য করার।'
তবে মন্ত্রণালয়ে এ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সরেজমিনে সার্ভে করে বাসা ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব করা বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বলেন, 'মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, সেটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এ পাখিরা প্রতিবছর একই বাগানে বাসা বাঁধে না। চার বছর আগে তারা খোর্দ্দবাউসা গ্রামে এসেছে। এখনো এখানে আছে। তবে খোর্দ্দবাউসা গ্রামে আসার আগে তারা চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের আমবাগানে বাসা বেঁধেছিল। আগামী বছর যে অন্য কোথাও চলে যাবে না তার নিশ্চয়তা নেই।' এজন্য জমি অধিগ্রহণ করে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা ঠিক হবে কিনা সেটাও বিবেচনা করা উচিৎ।
জানা যায়, বাঘার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের ওই বাগানটি গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখি এসে বাসা বাঁধে। তারা বর্ষার মৌসুমের শেষ দিকে আসে এবং বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়ে শীত শুরু হলে ও তাদের বাচ্চা উড়তে শিখলে চলে যায়। এবারও সেখানে লক্ষাধিক পাখি বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চা এখনও উড়তে শেখেনি।
এদিকে, পাখি বাসা বাঁধায় গত দুই বছর পাখির জন্য বাগান পরিচর্যা ব্যাহত হওয়ায় আমের ফলন কম হয়েছে বলে অভিযোগ বাগান ইজারা নেওয়া আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান। তিনি গত ৩০ অক্টোবর একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙে দেন এবং সব বাসা ভেঙে গাছ খালি করতে চান। তবে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী মানুষ তাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন।
একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক বসে। সেখানে ইজারাদার আতাউর রহমান তার আমগাছ ছেড়ে দিতে পাখিদের ১৫ দিনের 'আল্টিমেটাম' দেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়ার আরজি করেন একজন আইনজীবী।
আদালত শুনানি শেষে 'বাগানের পাখির বাসা কোনোভাবে ভাঙা যাবে না' বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে বাগান মালিকের সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ করে তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে নির্দেশ দেন।