চালের বাজারে কারসাজি, কেজিতে দাম বেড়েছে ৩-৭ টাকা

ঢাকা, জাতীয়

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-13 18:37:17

পেঁয়াজের পর এবার সিন্ডিকেটের কবলে চালের বাজার। আর তাতে মাত্র দুদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৩ টাকা থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। রয়েছে আরও বাড়ার শঙ্কা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতি মুনাফার লোভে মিলারদের কারসাজিতে দাম বাড়ছে চালের। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। তারা বছরের শেষ সময়টুকু তুরুপের তাস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতদিন চালের দাম কম ছিল। বাড়ার একটু দরকার ছিল, তাই বেড়েছে।

এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে চালের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

মিল মালিকদের দাবি,  আর কদিন বাদেই নতুন ধানের সিজন। তাই মিলগুলোতে কোনো ধান নেই। মিলে ধান না থাকায় চাহিদা অনুসারে চাল দিতে পারছেন। তাই চালের সংকট পড়েছে। ফলে চালের দামও বেড়েছে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি, ফকিরাপুল এবং শান্তিনগর বাজার ঘুর দেখা গেছে, মিনিকেট, নাজিরশাইল, বাসমতি এবং কাটারিভোগ চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৪ টাকা থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। শনিবার (১৬ নভেম্বর) এমনকি রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালেও ৪৬-৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মিনিকেট চাল বিকেলে একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৫২- থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে।

৫০ টাকার নাজির শাইল চাল ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৬৫ টাকার বাসমতি চাল ৭০-৭২টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

এছাড়াও ৩৬ টাকার আটাশ চাল ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।৩৭ টাকার লতা চালও ৪০ টাকা, গুটি, পাইজাম, হাসকি এবং বি-আর ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৯-৪০ টাকা কেজি দরে। ৪০ টাকা কেজির নিচে কোনো চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে না।

মতিঝিল এজিবি কলোনির চাল ব্যবসায়ী অমল চক্রবর্তী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। তা না হলে আর কদিন বাদে আসতে শুরু করবে নতুন চাল, এখন দাম কমার কথা কিন্তু উল্টো বাড়ছে?

একই অভিযোগ করেন শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন আহমেদ। সেলিম রাইস এজেন্সির এই মালিক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পেঁয়াজের পর এবার মিল মালিকরা চক্রান্ত করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। তারা চাল গুদামজাত করে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করছে বেশি দামে বিক্রি করবে বলে। তা না হলে এখন চালের দাম কমার সিজন। আর এখন উল্টো বাড়ছে।

বাবুবাজারের আড়ৎ থেকে চাল এনে বিক্রি করেন সেলিম। তিনি বলেন, প্রতিটি চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবহন খরচ। ফলে বাধ্য হয়ে আমাকে প্রতি কেজিতে সর্বনিম্ন ৪ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তার কথা প্রমাণও মিললে মিল মালিক অর্থাৎ বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাওসার আলম খানের সঙ্গে কথা বলে। চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খোঁড়া যুক্তি হিসেবে তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এতদিন চিকন চালের দাম কম ছিল। তাই এখন বেড়েছে।

তাহলে মোটা চালের দাম বাড়লো কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, চিকন চালের দাম বেড়েছে। তাই দেখা-দেখি মোটা চালের দামও বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, চালের দাম কমায় ধনীদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত এমনকি রিকশা ওয়ালারাও নাকি মিনিকেট, নাজিরশাইল এবং বাসমতিসহ চিকন চালের ভাত খেতে অভ্যাস করেছেন। ফলে নতুন করে চিকন চালের সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরও ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ চিকন চাল খেতো। কিন্তু এ বছর চালের দাম কম থাকায় সবাই চিকন চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় চালের সরবরাহ নেই।

এছাড়াও কদিন বাদেই নতুন ধান চলে আসবে। ফলে মিল মালিকদের হাতে পুরানো ধান নেই। তাই এখন কোনো চালই বানাতে পারছে না। ফলে হুট করেই চালের দাম বেড়েছে।  

এ সম্পর্কিত আরও খবর