সাভারের বাজারে রাতারাতি কেজিতে ৫০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম

ঢাকা, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-23 17:51:00

তীরে এসে এখন তরীই ডুবতে বসেছে পেঁয়াজ কারবারীদের। তরতর করে দাম কমছে পেঁয়াজের। এ পরিস্থিতিতে মজুদ করা পেঁয়াজ বাজারে দ্রুত সরবরাহ করেও নিজেদের পাতানো দাম ধরে রাখতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এমন চিত্রই দেখা গেল সাভারের পাইকারি বাজারে।

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের বাজারে এক রাতেই দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৫০ টাকা। রোববার (১৭ নভেম্বর) পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ২০০ টাকা।

অথচ সোমবার (১৮ নভেম্বর) পাঁচ কেজির এক পাল্লা পেঁয়াজ ৭৫০ টাকা- এমন হাঁকডাক করেও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

সাভারের গেন্ডা পাইকারি কাঁচাবাজার এ কথা হয় শাকিল ট্রেডার্সের মালিক জসিম দেওয়ানের সঙ্গে।

পেঁয়াজের যত্ন আত্তি করছেন এক ব্যবসায়ী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, পেঁয়াজ ক্রেতাদের সংখ্যায় ভয়াবহ রকম ধস নেমেছে। পাবনার পেঁয়াজ কেজি প্রতি দেড়শ’ টাকা হাঁকডাক করেও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছি না।

হঠাৎ দর পতনের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত, দাম বেশি হওয়ায় মানুষ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন, দ্বিতীয়ত, প্লেনে পেঁয়াজ আমদানির খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় যারা মজুদ করে রেখেছিলেন তাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

দ্রুত বাজারে যখন তারা পেঁয়াজ ছাড়ছেন, তখন দেখা গেল ক্রেতার সংখ্যা নেমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে।

তার ওপর মজুদ করা পেঁয়াজ থেকে গেঁজ (অঙ্কুর) বের হতে শুরু করেছে। ফলে মানও পড়তির দিকে।

 অঙ্কুর বের হওয়া পেঁয়াজ, ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইপ লাইনে থাকার পাশাপাশি হালি পেঁয়াজ (স্ক্যালিওন) নামে পরিচিত নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠতে থাকায় মজুদদারদের দিন শেষ হবার পথে, যোগ করেন জসিম দেওয়ান।

অতি মুনাফার লোভে ক্ষেত থেকে তোলা হয়েছে অপরিপক্ত হালি পেঁয়াজ (স্ক্যালিওন), ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, নতুন ওঠা পাতাসহ হালি পেঁয়াজ পাঁচ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। একেতো নতুন পেঁয়াজ। তার ওপরে তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় ছিল সে দিকেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে করে পেঁয়াজের দাম অল্প সময়ের মধ্যে আরও কমবে।

মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলতে কিংবা অতিরিক্ত মুনাফা করতে কারসাজির মাধ্যমে যারা পেঁয়াজ মজুদ করছেন, দিন শেষে বাজারে পেঁয়াজ না ছাড়লে তাদেরই পস্তাতে হবে বলে জানান এখানকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

আব্বাস আলীর নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, অন্যান্য দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত তিনি ৮০ থেকে ৯০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করলেও সোমবার এ সময়ে বিক্রি করেছেন মাত্র তিন বস্তা পেঁয়াজ।

বিক্রি কমে যাওয়ায় দোকানের খরচ উঠবে কিনা, তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যেখানে গড়ে এক থেকে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতেন তারা, সেখানে এখন ২০০ থেকে আড়াইশো গ্রাম পেঁয়াজ কিনছেন।

রহমত উল্লাহ নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, তার হোটেলে গড়ে ১০ কেজি পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও কোনো মতে তিনি তা আড়াই থেকে তিন কেজি দিয়ে সামাল দিচ্ছেন।

ক্রেতার অপেক্ষায় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

সেটা কীভাবে?

আগে ডিমের ওমলেট ও সালাদের সঙ্গে কিংবা তরকারির সঙ্গে আমরা বাড়তি কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজ দিতাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় নামমাত্র পেঁয়াজ দিয়ে তরকারি রান্নার পাশাপাশি সিঙ্গারা কিংবা পুরির সঙ্গে পেঁয়াজ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি, রহমত উল্লাহর ঝটপট উত্তর।

একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাজারে যে দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি চলছিল, তা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

তাদের মতে, ব্যবসায়ীরা গুদামে পেঁয়াজ পচিয়েছেন, তবু পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করেননি। একদিনের মধ্যে কেজিতে ৫০ টাকা দাম কমে আসাটা কারসাজির ইঙ্গিত দেয় বলেও মনে করছেন তারা।

সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দর আপাতত আর না বেড়ে বরং কমতেই থাকবে বলে ধারণা এখানকার ব্যবসায়ীদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর