সড়ক ও পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার পরে থেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছিল পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই এক অর্থে বেঁকে বসেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কসহ নগরী ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোর শ্রমিকরা কর্মবিরতির নামে অঘোষিত ধর্মঘটে নেমেছে।
মূলত পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপগুলোর ধর্মঘট থাকলেও সব ধরনের যান চলাচলে শৈথিল্য দেখা দিয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে। রাজধানীতে গণপরিবহনের দেখা নেই বললেই চলে। শহরে আকস্মিক গণপরিবহন শূন্যতায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
রাজধানীর সায়েদাবাদ জনপদের মোড় এলাকায় দেখা যায়, সকাল আটটা থেকে গণপরিবহনের অপেক্ষায় আছেন অফিসগামী অসংখ্য যাত্রী। এর মধ্যে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং পিএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। পিএসসি পরীক্ষার্থীরা কোনভাবে গন্তব্যে পৌঁছে গেলেও রাস্তায় আটকা পড়ে আছে অফিসগামী কর্মমুখী যাত্রীরা।
সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী অফিস করতে যাবেন মোঃ রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে আটটা থেকে বাসের অপেক্ষায় আছি কোন বাস পাচ্ছিনা যে অফিসে যাব। দশটার অফিস, এখন বারোটা বাজে! আমি সায়েদাবাদেই পড়ে আছি। হেঁটে রওনা দিলেও এতক্ষণ পৌঁছে যেতাম কিন্তু বাসের অপেক্ষা করেই যত বিপদ।
রাকিবের কথা শেষ না হতেই আবু রায়হান নামে এক ব্যক্তি বলেন, কেউ তো জানতো না আজ এতটা পরিবহন সংকট হবে। সংকট বলছি কেন? সংকট হলে তো রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া কম থাকবে। আজ তো একেবারেই নেই। ওরা (পরিবহন শ্রমিক) যদি ধর্মঘটই করবে, তাহলে সেটা আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। হুট করে এভাবে পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কি তারা তাদের দাবি আদায় করবে! দাবি যদি ন্যায্য হয় তাহলে সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করার কারণটা কি?
কথার মাঝেই দুটি মালবাহী ভ্যান এসে ডাক ছাড়ে যাইবেন নাকি মামারা? ভ্যান দুটি কারওয়ান বাজার পর্যন্ত যাবে বলে জানানো হয়।
গন্তব্য শুনেই অপেক্ষারত যাত্রীরা লাফিয়ে ভ্যানে উঠলেন। সামনে থেকে এক ভ্যান চালক বললেন "মামা ভাড়া একটু বাড়ায় দিয়েন।" যাত্রীদের সমস্বরে জবাব "যাও তো মামা, ভাড়া লইয়া আটকাইবো না,আগে চাকরি বাঁচাই।"
ভ্যানের একেবারে পেছনে বসা রাকিবুল হাসান যাওয়ার আগে বললেন, "অগ্যতা ভ্যানে করেই অফিস যাত্রা। তবুও চাকরিটা বাচুক!"