ঢাকাসহ সারাদেশে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এতে করে সারাদেশে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। ধর্মঘটের আগাম কোন ঘোষণা না থাকলেও রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না। আবার কোথাও কোথাও গণপরিবহন চললেও তাতে বাধা দিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে সারাদেশে একই চিত্র দেখা গেছে।
সারাদেশ থেকে পাঠানো বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের করেসপন্ডেন্টদের তথ্য তুলে ধরা হলো-
খুলনা: খুলনায় পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। খুলনা থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় খুলনা রেল স্টেশনে যাত্রীদের তীব্র চাপ বেড়েছে। অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়েও জোর করে ট্রেনে উঠেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। তবে ভোরের দিকে কিছু বাস মাওয়া রুটে ছেড়ে যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে মাহিন্দ্র, মিনি পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ ছোট গাড়িগুলোতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হচ্ছে।
বরিশাল: সড়ক পরিবহনের নতুন আইন সংস্কারের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে বরিশালে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করে ট্রাক ও কার্ভারভ্যান শ্রমিকরা। এতে করে বরিশালের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। ট্রাক শ্রমিকরা বলছেন আমরা সরকারের বিপক্ষে আন্দোলন করছি না। বরং আন্দোলন হচ্ছে সড়ক পরিবহনের নতুন আইনের বিরুদ্ধে। কেননা এই আইনের আওতায় দুর্ঘটনায় জড়িত চালকদের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ লাখ টাকার জরিমানা ধার্য্য করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাদের যদি ৫ লাখ টাকার জরিমানা দেওয়ার সামর্থ্য থাকতো তাহলে কি ট্রাক চালাইতাম।
রংপুর: রংপুর থেকে সারাদেশে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে সকল রুটে বন্ধ রয়েছে বাস, ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারীরা। শ্রমিকরা বলছেন, দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা নিরাপদ ও উন্নত না করেই সরকার এই আইন চাপিয়ে দিয়েছে। নিরাপদ সড়ক সবাই চায়, সবাই ভালোভাবে বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু দেশের সড়কের বেহাল অবস্থা ও অব্যবস্থাপনার সমাধান না করে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করা অযৌক্তিক।
বগুড়া: কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই বগুড়া থেকে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।এদিকে মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে কিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশা ছাড়া কোন বাস ট্রাক চলাচল করছে না। দূরপাল্লার যাত্রীরা তাই বাধ্য হয়ে ভ্যান কিংবা অটোরিকশা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের কোন কোলাহল নেই।
নারায়ণগঞ্জ: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীরা গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে। কিন্তু বাস নেই। এতে করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে নারায়ণগঞ্জের সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ। বেশি সমস্যায় পড়েছে পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী ও অফিসগামী লোকজন। অন্যদিকে জেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় পিইসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন। এতে করে পায়ে হেটে যেতে হচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্রে।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার আন্তঃজেলা সড়কপথে কোনো বাস চলাচল করছে না। বন্ধ রয়েছে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চলাচলকারী দক্ষিণবঙ্গের সকল বাস। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।