স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট তুলে নেয়ায় বৃহস্পতিবার (২১নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন চলতে শুরু করেছে।
সকালে রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান মতিঝিল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব রুটে গতকালের চেয়ে তুলনামূলক গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ লাইন অর্থাৎ জ্যাম লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া পল্টন মোড় থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত গণপরিবহনের জ্যাম ছিল।
গতকাল রাজধানীর যে সড়কগুলো ফাঁকা ছিলো। আজ তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। গণপরিবহন রাস্তায় নামায় রাজধানী তার আসল চেহারা ফিরে পেয়েছে। শাহবাগ থেকে মতিঝিল কোথাও কোনো শ্রমিকদের নৈরাজ্যের চিত্র চোখে পড়েনি। সাধারণ যাত্রীরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও তার গন্তব্যের কাঙ্খিত গাড়িটি পাচ্ছেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী মিজানুর রহমান শাহবাগ থেকে যাবেন মতিঝিল। কথা হলো তার সঙ্গে।
তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘গতকাল গাড়ি না পাওয়াতে অফিস করতে অনেক সমস্যা হয়েছে। পাশাপাশি বিকল্প উপায়ে অফিসে যেতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তবে আজ শাহবাগ মোড়ে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে মতিঝিলের বেশ কয়েকটি গণপরিবহন পাওয়া গেছে। পর্যাপ্ত গণপরিবহন রাস্তায় থাকায় আমাদের মত সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ খানিকটা লাঘব হয়েছে।’
মৎস্য ভবন থেকে গুলিস্তানে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ রাস্তায় গণপরিবহন বেড়েছে তাই স্বস্তিতে গন্তব্যে যেতে পারছি। তবে আইন মানার কথা বললেই শ্রমিকরা যে যানবাহন বন্ধ করে দেয়। এই সংস্কৃতি থেকে শ্রমিকদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
গুলিস্তান মোড়ে কথা হয় বেসরকারি এক চাকুরিজীবী সুমি আক্তারের সাথে। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ এবং গণপরিবহনের সংকট থাকার ফলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয় নারী যাত্রীদের। রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়লে নারীবান্ধব গণপরিবহন এখন বাড়েনি। শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি নামানোয় নারী যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে নারী যাত্রী হওয়ায় বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গাড়িতে উঠতে পারছি। গণপরিবহনের সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় পরিবহন আরো বাড়ানো উচিত।’
মিরপুর থেকে গুলিস্থান রুটে চলাচলকারী খাঁজাবাবা পরিবহনের চালক মোসলেম আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে তাই আমরা আবার রাস্তায় গাড়ি নামিয়েছি। আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সে কিছু সমস্যা আছে। বেশিরভাগ চালকের কাছে এখন লাইট ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। যা দিয়ে ভারী যানবাহন চালানো যায় না। আর এই কাগজ দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালালে নতুন আইনে অনেক টাকা জরিমানা গুণতে হবে। ইতোমধ্যেই বিআরটিএতে আমরা নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। নতুন লাইসেন্স পেতে সময় লাগবে। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ বেশকিছু দাবির জন্য সরকার আমাদের এক বছর সময় দিয়েছে। এক বছরের মধ্যে আমাদের কাগজপত্র সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মিরপুর থেকে গুলিস্থান রুটে চলাচলকারী তানজিল পরিবহনের চালক প্রণব বিশ্বাস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘একদিন কর্মবিরতি থাকার পর গাড়ির মালিকের নির্দেশে আজ রাস্তায় গাড়ি নামানো হয়েছে। তানজিম পরিবহনের প্রায় সবকটি গাড়ি আজ রাস্তায় নেমেছে। আমার নিজের এবং গাড়ির কাগজপত্র রয়েছে। তারপরেও নতুন আইনে অনেক টাকা জরিমানা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অযথা হয়রানি করে ফলে আমরা কিছুটা ভয়ে আছি।’
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে পরিবহন ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়েছে। ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট শুরু করলেও বাস শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন। বুধবার ( ২০ নভেম্বর) মধ্যরাতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।