সারাদিন রোদের দাপট থাকলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত দরজায় কড়া নাড়ছে। ভোরের দিকে কুয়াশার সঙ্গে হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। রাতে শীত মোকাবিলা করতে গায়ে জড়াতে হচ্ছে তুলনামূলক মোটা কাঁথা। তবে কোম্বল বা লেপ এখনও বিছানায় জায়গা দখল করতে পারেনি।
জেলা শহরগুলোর তুলনায় নগরীতে শীত একটু দেরিতে আসে। তবে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আগমনে নগরবাসী ধারণা করেছিল শীত বুঝি এসে গেছে। কিন্তু দুই-তিন দিন পরে আবারও শুরু হয় রোদের রাজত্ব। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে শীত বস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। হাঁক-ডাক দিয়ে তারা বাহারি রঙের শীতের পোশাকের ক্রেতা খুঁজছেন।
রাজধানীতে এখনও জোরালো শীত না পড়ায় বেচাকেনা তেমন একটা শুরু হয়নি বলে জানান নগরীর দোকানিরা। তবে টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। যারা কিনতে এসেছেন তারা পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কিনছেন শীত বস্ত্র। শুক্রবার ধানমন্ডি হকার্স, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, নুরজাহান মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
দোকানিরা জানান, গত শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে শীত বস্ত্রের কেনাবেচা তবে কেউ কেউ নভেম্বরে শুরু থেকেও দোকানে রাখছেন গরম কাপড়। কিন্তু এই এক সপ্তাহ ধরে টুকটাক বেচাকেনা হচ্ছে। সারা দিনের তুলনায় সন্ধ্যা থেকে বিক্রি একটু বাড়ে বলেও জানান তারা। এখন একটু দাম কম থাকার কারণেও কিনছেন অনেকেই। তবে ফুটপাতের দোকানগুলোতে পুলিশের নজরদারি থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে বিক্রেতাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশের গাড়ি দেখলেই ফুটপাতে বিছানো দোকান গুটিয়ে এক কোণে লুকিয়ে পড়ছেন দোকানিরা।
উলের বোনা সোয়েটার, হুডি সোয়েটার, চাদর, শাল, ওভারকোট, লেদার জ্যাকেট, ব্লেজার, মাফলার, কান ঢাকা টুপি, হাতমোজা, কম্বল সবই মিলছে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে। বড় ছোট সবার জন্যই পাওয়া যাচ্ছে শীতের পোশাক।
এগুলোর মানভেদে দাম নির্ধারণ করেছেন দোকানিরা। ফুটপাতের দোকানগুলোতে সোয়েটার সর্বনিম্ন ৫০-২০০ টাকা, চাদর ২০০ টাকা, হাতমোজা এবং পা মোজা ৫০- ১৫০ টাকা এবং টুপি ১০০-২০০ টাকা মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর মার্কেটের ভিতরে জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে ৮০০- ৫০০০ টাকা, চাদর বা শাল সর্বনিম্ন ৮০০- ৫০০০ টাকা পর্যন্ত, সোয়েটার ৩০০-৭০০ টাকা, কম্বল ৩০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
ফুটপাতের বিক্রেতা ওমর বলেন, আজকের তুলনায় গত শুক্রবারে ভালো বিক্রি করছি। তবে সন্ধ্যার পর থেকে বিক্রি আরেকটু বাড়বে বলে আশা করতেছি। কিন্তু পুলিশ একটু পরপর দৌড়ানি দেয় এইজন্য বেচা-বিক্রিতে একটু ঝামেলা হচ্ছে।
ফুটপাতের আরেক বিক্রেতা অনিক জানান, রাজধানীতে এখনও তেমন শীত না পড়লেও জেলা শহরগুলোতে ভালোই শীত পড়েছে। এই কারণে অনেকে গ্রামে যাওয়ার আগে প্রিয়জনদের জন্য শীত বস্ত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিক্রি মোটামুটি ভালো। গত চার-পাঁচ দিন ধরে গরম কাপড় বিক্রি শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।
দেলোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, আজকে শুক্রবার ছুটির দিন তাই এসেছি শীতের কাপড় দেখতে। সামনে শীত আসছে এই কারণে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কিনতে চাচ্ছি। পরে আবার দাম বেড়ে যেতে পারে। যদি দামে মিলে তাহলে কিনে ফেলব।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের কম্বল বিক্রেতা রনি বলেন, নভেম্বরের ১০ তারিখ থেকে বিক্রি শুরু করেছি। কিন্তু এখনও তেমন শীত না পড়ায় বিক্রি অনেক কম। দিনে তিন-চারটার মতো বিক্রি হয়।
নিউমার্কেটের বিক্রেতা সোহেল বলেন, কাস্টমার তেমন নেই বললেই চলে। বিক্রি একেবারেই কম তবে আর কয়েকদিন পর থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।
বেবি আক্তার নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, এখন শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য গ্রামে পাঠানোর উদ্দেশ্যে কিনতে এসেছি। আমরা যেহেতু ঢাকায়ই থাকি আর এখানে তো এখনো শীত পড়েনি তাই নিজেদের জন্য পরে কিনব। তবে দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম এবং নাজমা আক্তার ক্রেতা দম্পতি জানান, সামনে শীত আসছে তাই একটু আগেই পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কিনতে এসেছি। পরে দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হঠাৎ করে শীত পড়ে গেলে তাড়াহুড়ো বেঁধে যায়, সব সময় তো মার্কেটে আসা সম্ভব হয় না। আজকে ছুটির দিন তাই এসেছি।
ভারতীয় ও চাইনিজ শাল বিক্রেতা শরিফুল জানান, এখনও বিক্রি তেমন জমে ওঠেনি। কাস্টমার আসছে-দেখছে আবার চলে যাচ্ছে। এখনও কেনার তেমন তোড়জোড় নেই।