অসতর্কতায় বাড়ছে অসংক্রামক রোগ

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 11:21:33

দেশে দিন দিন অসংক্রামক রোগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, সিরোসিসসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগ এখন প্রায় বেশির ভাগ বাড়িতেই দেখা যাচ্ছে। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে আমাদের জীবন মানে অসতর্কতা। মানুষ এখন তাদের নিজেদের শরীরের যত্ন নেয় না। চর্বি, তেল, চিনিযুক্ত খাবার বেশি খায়। ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করে না, সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করে না।

এর ফলে মানুষজন নিজেদের অজান্তেই নিজের শরীরে অসংক্রামক রোগের বাসা বানিয়ে ফেলছে। এই রোগগুলির কারণে রোগাক্রান্ত মানুষটির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি তার পরিবার তথা দেশেরও সমান ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের বহুমাত্রিক পরিকল্পনার পাশাপাশি জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বহুখাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির কারণগুলো হলো তামাক সেবন, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, শারীরিক অলসতা, মদ্যপান ইত্যাদি। এসব যদি কারো জীবনাচরণে বিদ্যমান থাকে তাহলে তাদের মধ্যে এই রোগগুলো হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। যেহেতু এই দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলো একবার হয়ে গেলে তা সারাজীবন থাকে, তাই রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে আমাদের রোগ প্রতিরোধের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। আর এসব ঝুঁকির কারণগুলো নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারের অন্যান্য খাতের ওপর নির্ভরশীল।

প্রণয়নকৃত বহুখাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমের মূল বুনিয়াদী নকশা হিসেবে বিবেচিত হবে। ‘সকল নীতিতে স্বাস্থ্য’ এই মূলমন্ত্র ধারণ করে যদি সকল বিভাগ, সংস্থা ও দপ্তর তাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে, সমাজের সকল অংশ, গণমাধ্যমকর্মীরা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব সবাই যদি একযোগে কাজ করে তবেই অসংক্রামকরোগের আসন্ন মহামারী মোকাবেলায় সফলতা লাভ করা সম্ভব হবে বলে জানান স্বাস্থমন্ত্রী।

সভায় বক্তারা জানান, বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে যার ২২ শতাংশই হলো অকালমৃত্যু। এছাড়াও অকাল মৃত্যুর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কারণ হলো আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে ডোবা ইত্যাদি।

বক্তারা আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদী এই সকল অসংক্রামক রোগ ও তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার ফলে প্রতিবছর লক্ষাধিক লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যায়। ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর সেজন্যই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অসংক্রামক রোগকে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—কমিউনিটি স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর