মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী ধরতে অপারেশন 'মেগা থ্রি'

, জাতীয়

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-07 10:45:35

 

ঢাকা: মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার জন্যে পরিচালিত রিহায়ারিং প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে শনিবার (৩০ জুন)। এরপর জুলাইয়ের প্রথম দিন, রোববার থেকেই শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অপারেশন মেগা থ্রি।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  রোববার (১ জুলাই) রাতে কুয়ালালামপুর, পেনাং, জোহর বারু, বাঙ্গির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ এবং পুলিশ।

ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক মুসতাফার আলী জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রিহায়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হতে সুযোগ দেয়া হয়। বিভিন্ন ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে ২ বছর ৪ মাস ধরে চলে এই প্রোগ্রাম। যারা এই সময়ের মধ্যেও নিজেদের পুনঃনিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেননি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর অপারেশন 'মেগা থ্রি'তে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে অবৈধ অভিবাসী এবং তাদের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, কোন পক্ষের সুবিধার জন্যে আমরা দেশে অবৈধ অভিবাসীদের স্রোতকে সমর্থন দিতে পারি না। দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বছরের ২৮ মে পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪২ জন অবৈধ অভিবাসী রিহায়ারিংয়ের আবেদন করেছেন। এছাড়াও ৮৩ হাজার ৯১৯ জন নিয়োগকর্তা রিহায়ারিং প্রোগ্রামের আবেদন করেছেন। তবে আটক হওয়াদের মধ্যে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৯১ জন মানবাধিকার প্রেক্ষাপটে আবেদন করেছেন। যেখানে ৩ লাখ ৭ হাজার ৫৫৭ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে।

এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ইমিগ্রেশন এবং পুলিশের যৌথ অভিযান।

তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ব্যাপক অভিযান পরিচালিত হবে। এছাড়াও যেসব মালিকরা অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ দিয়েছেন বা পুনঃ নিবন্ধন করাননি তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

তিনি বলেন, দেশে অবৈধ অভিবাসীর স্রোত ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নিতেই হচ্ছে।

এসময় ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক আরও জানান,  জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত মোট ১৯ হাজার ৯৬৯ জন বিদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৩৬ জন মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৯ হাজার ৮৫৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। বাকিদেরও শীঘ্রই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।

তিনি জানান, আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ইন্দোনেশিয়ান। প্রতিবেশি এই দেশটির ৬ হাজার ৮৭১ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা। ৩ হাজার ৯৩৫ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে ৬ মাসে। এরপরে রয়েছেন ২ হাজার ১১ জন ফিলিপাইনের এবং ১ হাজার ৯৯০ জন মিয়ানমারের নাগরিক।

এদিকে রোববার থেকে শুরু হওয়া অভিযানের পর থেকে কিছু কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা কমে গিয়েছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে নিয়োগকর্তারা। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ান এমপ্লয়ারস ফেডারেশন জানিয়েছে, নির্মাণ শিল্প এবং প্ল্যান্টেশন সেক্টরে শ্রমিকের সংকট তৈরী হবে বলে আশংকা করা যাচ্ছে। ফেডারেশনের নির্বাহী পরিচালক দাতুক শামসুদ্দিন বারদান বলেছেন, এই ধরনের অভিযানের কারণে এখন শ্রমিকরা অনেকেই লুকিয়ে থাকবে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো শেষ করতে দেরি হয়ে যাবে আবার তার জন্যে জরিমানাও গুণতে হতে পারে। 

তিনি বলেন, এভাবে অভিযান চলতে থাকলে আমার মনে হয় না বিদেশি শ্রমিকরা খুব বেশি স্বাধীনমতো চলাফেরা করবে। তারা অবশ্যই পালিয়ে থাকবে এবং প্রকল্পগুলোতে তার বাজে প্রভাব পড়বে। সাবাহ'র প্লান্টেশন সেক্টরেও এর প্রভাব পড়বে। সরকারকে যেমন শক্তভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে, তেমনি যেন অর্থনৈতিক বিপর্যয় না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর