‘পাম্প বন্ধ তো হামার কামাইও বন্ধ’

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-26 16:48:37

মিজানুর রহমান। সকালে মাইক্রোবাস নিয়ে বের হয়েছিলেন বিয়ে অনুষ্ঠানে ভাড়ায় যাবেন। কিন্তু পেট্রোল পাম্পে তেল সংগ্রহ করতে এসে জানতে পারেন পাম্পে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। তেল বিক্রি বন্ধ। গাড়িতে তেল না থাকায় তাকে বিয়ে অনুষ্ঠানের ভাড়া বাতিল করতে হয়েছে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বর ব্রিজ সংলগ্ন রহমান পাম্পের কাছে মাইক্রোবাস চালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে এ কথা জানান।

মিজানুর রহমানের মতো অনেক মাইক্রোবাস চালক পেট্রোলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে পাম্পে তেল না পেয়ে হাত গুটিয়ে অলস সময় পার করছেন। শুধু মাইক্রোবাস নয়, মোটরসাইকেল, কার, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানের চালকরাও ধর্মঘটের কবলে পড়ে জ্বালানি তেল না পেয়ে গাড়ি চালাতে পারছেন না।

দুপুরে নগরীর স্টেশন রোডে ছালেক পাম্প, শাপলা চত্বরে ইউনিক ট্রেডার্স, টার্মিনাল রোডে সুরমা ফিলিং স্টেশন সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ফিলিং স্টেশনগুলোতে ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাসের চালকরা তেল নিতে না পারায় গাড়িগুলো সারি সারি করে রেখেছেন।

এসময় শাপলা চত্বরে কথা হয় অমল রায় নামে মাইক্রোবাস চালকের সাথে। তিনি বলেন, ‘আইজ থাকি পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ। ধর্মঘট পালন হওচে (হচ্ছে)। পাম্প বন্ধ করলে তো হামার (আমার) গাড়িও বন্ধ থাকে। তেল ছাড়া তো গাড়ি চলে না। পাম্প বন্ধ তো হামার কামাই (উপার্জন) বন্ধ।’

অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে
তেল না পাওয়ায় শহরে যানবাহনের চাপ ছিল না রাস্তায়, ছবি: বার্তা২৪.কম

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন, দ্রুত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা না গেলে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি শ্রমিকদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে।

জানা গেছে, জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন ও ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে আজ রোববার থেকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট (কর্মবিরতি) পালন করছে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এই ধর্মঘট রংপুর বিভাগের আট জেলা ছাড়াও খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব পাম্প ডিপোতেও চলছে। এতে জ্বালানি তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণনসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

পাম্প থেকে তেল না দেওয়ায় মোটরসাইকেল, মিনি বাস, মাইক্রোবাসসহ পণ্যবাহী বিভিন্ন পরিবহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। ফলে সড়কে পরিবহন চাপও কম।

পেট্রোল পাম্প মালিক ও জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী সমিতি রংপুর বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক শাহ মো. সেলিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আলোচনায় বসার নামে বহুবার কালক্ষেপণ করা হয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছি।

এই ধর্মঘটের প্রতি ট্যাংকলরির অধিকাংশ শ্রমিকরা সমর্থন জানিয়েছে। তারা মনে করছেন, ট্যাংকলরি চালাতে গিয়ে সড়কে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ অন্যান্য দাবি বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর