২৫০ টাকার পেঁয়াজ সরকার বিক্রি করছে ৪৫ টাকায়!

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-22 16:20:29

নানামুখী উদ্যোগেও পেঁয়াজের ঝাঁজ কমানো যাচ্ছে না। পেঁয়াজের অস্থির বাজারের দায়ভার পড়েছে সরকারের ওপর। যদিও মানুষের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সরকার সর্বোচ্চ ভর্তুকি দিয়ে মিশর, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে তাৎক্ষণিকভাবে আকাশ পথেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। সেই পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে ২৫০ টাকা খরচ পড়লেও সরকার ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছে টিসিবির মাধ্যমে।

সাধারণত ভারত থেকে সড়ক পথে এবং মিয়ানমার থেকে নৌ পথে পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও এবারই প্রথম আকাশ পথে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। কেবল মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়েই সরকার তড়িৎ গতিতে পেঁয়াজ আমদানি করে। আকাশ পথে পেঁয়াজের প্রথম চালান আসে গত ২০ নভেম্বর। পাকিস্তানের করাচি থেকে ৮২ টন পেঁয়াজ নিয়ে কার্গো প্লেন ঢাকায় অবতরণ করে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব মতে দেশে প্রতিদিন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৬ হাজার টন। এ হিসেব ধরে মাসে প্রয়োজন ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। দেশে উৎপাদনও হচ্ছে ২৩-২৪ লাখ টন। এর মধ্যে বীজ এবং পচে যাওয়া অংশ বাদ দিলে থাকে ১৬-১৭ লাখ টন। তাই প্রতি বছর প্রায় ৭-৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আর সেই আমদানির সিংহভাগই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। টিসিবি’র হিসাবে পেঁয়াজ আমদানির ৯০ ভাগই ভারতের বাজারের ওপর নির্ভরশীল।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হতে থাকে। বর্তমানে রেকর্ড দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ৩০-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাজারে ২০০ টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়া দুষ্কর।

পেঁয়াজের চলমান সংকট মোকাবেলায় আকাশ পথে ও নদী পথে মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করলে সড়ক পথে আসতে যেখানে ৪-৫ দিন সময় লাগে সেখানে মিশর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আসতে লাগছে দেড় থেকে দুই মাস। যে কারণে চাইলেও হুট করে দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে না সরকার।

তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানির ফলে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আনা হচ্ছে তার ২৫ শতাংশই পচনজনিত কারণে নষ্ট হচ্ছে ফলে ঘাটতি কিছুটা মেটানো সম্ভব হলেও বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় মিশর ও তুরস্ক থেকে নদী পথে পেঁয়াজের প্রথম চালান ২৯ নভেম্বর বন্দরে এসে পৌঁছায়। আরও কয়েকটি চালান নদী পথেই রয়েছে। এসব পেঁয়াজ যখন দেশের বাজারে ঢুকবে তখনই কেবল দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নদী পথে আমদানি করা পেঁয়াজের চালান আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত দুই মাসে আমাদের বন্দরে প্রায় ২০ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। এখানে বেশির ভাগ জাহাজ আসে সিঙ্গাপুর থেকে তাই আমরা বলতে পারব না আসলে কোন দেশ থেকে আসছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে সারা দেশে। বর্তমানে ঢাকায় ৫০টি ট্রাকে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। প্রতি ট্রাকে ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ থাকে। সেখান থেকে জন প্রতি ১ কেজি করে পেঁয়াজ কেনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সারাদেশে প্রায় ৩০০টি ট্রাকে একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, চাইলেই চট করে সমস্যার সমাধান হবে না। বুঝতে হবে আমরা এতদিন একটি মাত্র দেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। তারা বন্ধ করে দেওয়াতে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এখন মিয়ানমারেও পেঁয়াজের দাম বেশি, তাছাড়া ভারতেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ রুপিতে, যা টাকায় ১৪২ টাকা। আমরা এত দিন ভারত থেকে আমদানি করতাম। সেখান থেকে পেঁয়াজ আনতে লাগত ৪-৫ দিন। এখন মিশর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আসতে লাগে দেড় থেকে দুই মাস। আর আকাশ পথে যদি পেঁয়াজ আনি প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর পড়বে ২৫০ টাকা। আর নদী পথে আনলে খরচ পড়বে সাড়ে ৩৭ টাকা। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্লেনে যে পেঁয়াজ আমদানি করেছি তা প্রতি কেজি ২৫০ টাকা খরচ পড়েছে, সেটা বিক্রি করছি মাত্র ৪৫ টাকায়। প্রায় ২০৫ টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, মিশর, তুরস্ক ও অন্যান্য দেশ থেকে যখন পুরোদমে পেঁয়াজের চালান দেশে আসবে এবং দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ যখন বাজারে উঠবে তখনই কেবল বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর