লাশ নয়, রুম্পা হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-12-31 17:28:39

পুলিশ অফিসারের সন্তান হয়েও রুম্পা হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক। ব্রহ্মপুত্রের তীর ময়মনসিংহ থেকে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করছিলেন তিনি। গৃহশিক্ষকতা আর উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে চলেছিলেন শিক্ষকতার মহান পেশার দিকে। স্বপ্নপূরণের লড়াইয়ে বিজয়ী হতে পারেননি রুম্পা। রহস্যময় মৃত্যুর ছোবলে লাশ হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়লেন সম্ভাবনাময় তরুণী।

রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পরিবারও আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল। এরপরও মেয়ে রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার স্বপ্ন ছিলো মানুষ গড়ার কারিগর হবার। ছোটবেলা থেকেই সেই স্বপ্ন বুনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। নিজেকে একজন প্রজ্ঞাবান শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে পড়াশুনার পাশাপাশি করতেন টিউশনি।

কিন্তু স্নাতক জীবনের দু’বছর পার না হতেই রহস্যজনক মৃত্যুতে থমকে গেছে সব। শিক্ষক হবার স্বপ্ন নিয়ে ছুটে চলা রুম্পা এখন মাটির বিছানায় চিরতরে ঘুমন্ত। সাথে তার স্বপ্নেরও হয়েছে সমাধি। আর পরিবারে নেমে এসেছে হাহাকার ও আহাজারি।

 

গত বুধবার রাতে রাজধানী ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে দুই বাড়ির মাঝ থেকে রুম্পার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর মরদেহ উদ্ধারের সাথে সাথেই রুম্পার লালিত স্বপ্ন পরিবারের কাছে হয়ে উঠে অধরা। তার মৃত্যুকে ঘিরে পুঞ্জিভূত হয় তীব্র প্রতিবাদ। সহপাঠীরা নেমে আসে রাস্তায়।

 

সরেজমিনে রুম্পা পরিবারের খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। শীতার্ত পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে স্বজন-পরিজনের মর্মস্পর্শী আর্তনাদে।

বার্তা২৪.কম'কে রুম্পার পরিবার জানায়, রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন রুম্পা। ইংরেজি বিষয়ের প্রতি ভীষণ আকর্ষণ থেকেই স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন এই বিভাগে। স্নাতকের মাত্র দু’বছরের গণ্ডিতে পা রাখলেই সব স্বপ্ন ধূসর হয়ে যায়। সামনের সব স্বপ্নকে না ছুঁইয়েই চলে যান রহস্যময় মৃত্যুর ছোবলে না ফেরার দেশে।

একমাত্র মেয়েকে চিরতরে হারিয়ে বাবা রুককুন উদ্দিন এখন শোকে পাথর, বাকরুদ্ধ। কিছু বলতে চেয়েও পারেননা। এক পর্যায়ে বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েটার আর শিক্ষক হওয়া হলোনা।’

মেয়ের দাফনের একদিন পেরিয়ে গেলেও নিজেকে এখনো সামলে নিতে পারছেন না বাবা-মা। তারা দুজনই বারবার ছুটে যাচ্ছেন মেয়ের কবরের পাশে। সেখানেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের নোনা জল ফেলছেন অব্যক্ত বেদনায়।

মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি প্রেক্ষাপটে পরিবারের সুস্পষ্ট দাবি, 'এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।' পাড়া-প্রতিবেশী, সহপাঠীদেরও দাবি তাই। অনেকেই মনে করেন, 'রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে।'

এদিকে রুম্পা হত্যার দুদিন পার হয়ে গেলেও ঘটনার রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এমন কি মামলা হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু খুজে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজনরা। সবাই অধিকতর তদন্তের দাবিও জানান।

মা নাহিদা আক্তার পারুলের ভাষ্য, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল করে খোঁজ নিলেই আমার মেয়ে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।’ তিনি ন্যায়বিচার চান। রুম্পার আত্মীয় ও বন্ধুরাও চান রহস্যময় হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ খুঁজে বের করা হোক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর