মন্ত্রী চান সমঝোতা, এমপিরা বলছেন চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 20:12:53

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গায় বহুতল ভবন করে সেখানে মার্কেট কাম আবাসিক ভবন করা হচ্ছে যেন মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ওই টাকা ব্যবহার হয়। সে চিন্তা থেকেই রাজধানীর গুলিস্তান সিনেমা হলের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উদ্যোগ ভালো হলেও অসম চুক্তিতে বঞ্চিত হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

নানামুখী চেষ্টার পরেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপায়ন্তর না দেখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক হক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতায় দাঁড় উন্মোচন করতে চান। কিন্তু তার এই প্রস্তাব বেশিক্ষণ টেকেনি। বৈঠকেই বাদ সেধেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপোষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

কথাগুলো হচ্ছিল গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স ভবন নিয়ে। ভবনটি এমনভাবে চুক্তি করা হয়েছে যেন নিজের জায়গায় পরাধীন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আর ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয় ২০ তলা ভবন নির্মাণ করবে। নির্মাণের পর সব ফ্লোর বিক্রি করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বিনিময়ে কল্যাণ ট্রাস্ট পাবে দোকান ভাড়ার টাকা।

বিএনপি নেতাএ এস এম আলাউদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স দ্যা ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে ২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চুক্তি করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। শূন্য দশমিক ৬ হাজার ১৪০ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করার কথা ছিল ২০ তলা ভবন। চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে ২০ তলা ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু সে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় পরে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। সে হিসেবেও ২০০৭ সালেই ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে আজ অবধি শেষ হয়নি ভবন নির্মাণের কাজ। তবে কাজের কাজ করে গেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ১০ তলা পর্যন্ত যে সকল ফ্লোর নির্মাণ হয়েছে সেগুলো বিক্রি করে লাপাত্তা তারা। চুক্তিতে ছিল ২০ তলা ভবন বুঝিয়ে না দিলে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। সেই জরিমানা আটকাতে আদালতের দ্বারস্থ হয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এখন ভবন নিয়ে দোটানায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। সেখানে কমিটির সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, 'শুরুতে আমরা চেষ্টা করেছি, চুক্তিটি বাতিল করার জন্য। উপরন্তু ঠিকাদার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা জিতলেও আপিল হবে। সুতরাং দীর্ঘসূত্রিতা থাকবে। তাই কমিটি যদি মনে করে তাহলে সমঝোতার মাধ্যমে বাকি কাজ শেষ করা যেতে পারে এবং প্রতি বর্গফুটের ভাড়া বৃদ্ধি করে কল্যাণ ট্রাস্টের আয় বাড়ানো যেতে পারে।'

কমিটি সভাপতি শাজাহান খান বলেন, 'কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ভবনটি দখলে রেখেছে এবং জামুকা সেখানে জিম্মি হয়ে রয়েছে। আদালতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে মামলা করে ভবনের বাকি কাজ ঝুলিয়ে রেখেছে। এখন মামলা শেষ হতে কত বছর সময় লাগবে, সেটা বলা কঠিন। তাই তিনি বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদের মতামত চেয়ে বলেন, সকলে মতামত দিলে চূড়ান্ত করা যেতে পারে। এখানে প্রতি বর্গ ফিট ৬-১০ টাকা হিসেবে ভাড়া দেওয়া আছে। কল্যাণ ট্রাস্ট কোনো অর্থ পাচ্ছে না। এই ভাড়া যদি বৃদ্ধি করা যায় তাহলে, এখন যা পাওয়া যাচ্ছে তার তুলনায় বহুগুণ ভাড়া কল্যাণ ট্রাস্ট পাবে।

মন্ত্রীর সমঝোতা প্রস্তাবের বিষয়ে কমিটি সদস্য সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেছেন, 'ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোনো মতেই আপোষ করা যাবে না। মামলা চলবে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো অন্যায়কে মেনে নিতে রাজি নন।'

কমিটির আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, বিশ্বের কোথাও এ ধরনের অসমচুক্তি নেই। এখন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের স্বার্থকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে কিভাবে গুলিস্তান কমপ্লেক্সের বাকী কাজ শেষ করা যায় সে বিষয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।

সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। গত ১ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। দ্রুততার সঙ্গে এর সমাধান চান সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর