বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন রেল কারখানা পাহাড়তলী ক্যারেজ ও ওয়াগন শপ। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে বহুকাল কোন উন্নয়ন হয়নি। দীর্ঘ ৭২ বছর পর পাহাড়তলী রেল কারখানায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কারখানার অবকাঠামো থেকে শুরু করে মেশিনারিজেও এসেছে ডিজিটাল যুগের ছাপ।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দিনভর পাহাড়তলী রেল কারখানা ঘুরে এর ভেতরে চলমান উন্নয়ন কাজের দৃশ্য চোখে পড়ে। ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে কারখানাটিতে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
৩৫ একর জমিতে অবস্থিত কারখানাটির ভেতর ২২টি সাব শপ রয়েছে। সবগুলো শপের টিনের শেড পরিবর্তন করা হয়েছে, বসেছে নতুন শেড। কারখানাজুড়ে ১২ কিলোমিটার পুরনো রেললাইন ছিল। সেইসব পুরনো লাইন তুলে নতুন করে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।
বেশ কিছু শপে নতুন ডিজিটাল মেশিন স্থাপন হয়েছে। যার সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করা যায়, এতে শ্রমিকের হাতের সাহায্য কমই লাগে। রেলের চাকা মেরামত করার জন্য একটি হুইল টার্নিং মেশিন, একটি হুইল বোরিং মেশিন, একটি হুইল প্রেস মেশিন ও একটি টায়ার রোলিং মেশিন বসানো হয়েছে। এতে হুইল শপে চাকা মেরামতের কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। এর বাইরেও একটি হুইল ড্রেসিং রুম এবং নতুন একটি বগি ক্লিনিং রুম তৈরি করা হয়েছে।
এক শপ থেকে অন্য শপে বগি নিতে দুটি ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেন কেনা হয়েছে। একটি নিউমেটিক হেয়ার মেশিন এবং দুটি প্রোফাইল ইলেকট্রিক কাটিং মেশিন বসানো হয়েছে। সবগুলো গোডাউনে ফ্লোরের উচ্চতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। শেডের বাইরে নতুন করে ৭০ ইঞ্চি ফ্লোর আরসিসি ঢালাই দেওয়া হয়েছে।
কারখানার প্রবেশ পথের গেট বড় করা হয়েছে। যাতে করে বড় গাড়ি প্রবেশ করতে পারে। একই সাথে কারখানার অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো নতুনভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। কারখানার দেওয়ালে চড়েছে নতুন রং। কারখানার ভেতরে যেসব ড্রেন অপরিচ্ছন্ন ছিলো সেগুলোও পরিষ্কার করে নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
পাহাড়তলী রেল কারখানার সরকারি কর্ম ব্যবস্থাপক শংকর লাল সাহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার চাকরি জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই কারখানায় কাজ করছি। দীর্ঘদিন ধরে কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি এ কারখানায়। এখন কারখানাটির উন্নয়ন হয়েছে তাই কাজের মান বৃদ্ধি পাবে এবং কাজের পরিধিও বাড়বে। বিশ্বের অনেক দেশে গিয়েছি রেল খাতের বিভিন্ন বিষয় দেখতে। আমি মনে করি আমাদের রেল কারখানা আরও বেশি ডিজিটাল মেশিন দিয়ে আধুনিক করার সুযোগ রয়েছে। যথাযথ বাজেট দিলে আমরা ভালো কাজ করতে পারব।
রেল কারখানার উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী ক্যারেজ ও ওয়াগন শপের ওয়ার্কার্স ম্যানেজার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘদিন পরে রেল কারখানার উন্নয়ন হওয়ায় কাজের অগ্রগতি হয়েছে। লোকবল বাড়ালে এখনকার চেয়ে বেশি কোচ মেরামত করতে পারব।
তিনি বলেন, পাহাড়তলী রেল কারখানা কেন্দ্রিক চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৫ সালে শুরু হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসেই উন্নয়ন কাজের সব শেষ হবে।
আরও পড়ুন: রেল মেরামত ও যন্ত্রাংশ তৈরির কাজে নারীরা