‘স্কুল ভাঙি গেইলে কোনটে পড়মো‘

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 01:11:41

রংপুর: ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে হামার (আমার) স্কুলের বগলোত (কাছাকাছি) চলি আসছে। কখন যে পানিত ডুবি যায়। দয়া করি হামার স্কুলটা বাঁচান। স্কুল ভাঙি গেইলে হামরা (আমরা) কোনটে পড়মো (পড়ব)।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিল শাহিদা খাতুন। সে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল আনন্দলোক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

তিস্তা নদীবর্তী গঙ্গাচড়ার চরাঞ্চল এলাকায় ধেয়ে আসা বন্যার পানিতে একের পর এক ভাঙনের হুমকির মুখে ওই বিদ্যালয়টি। এ কারণে স্কুল নিয়ে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় রয়েছে এখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তার ভাঙন এসে ঠেকেছে একদম বিদ্যালয়ের কাছাকাছি। আর মাত্র পাঁচ ফুট ভাঙলে যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি তিস্তা গর্ভে বিলীন হবে। আতঙ্কে থাকা স্থানীয় এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিশু শিক্ষার্থীরা ভাঙন ঠেকাতে বাঁশের পাইলিংসহ গাছের ডালপালা ও বালু ভর্তি বস্তা ফেলছে। তাদের সম্বলিত চেষ্টা ও প্রার্থনা নদী গর্ভে যেন হারিয়ে না যায় প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বর্তমানে তিস্তার ভাঙন এসে ঠেকেছে একদম বিদ্যালয়ের কাছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাছরিন সুলতানা বলেন, ‘চরাঞ্চলের মতো এলাকার অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের জন্য এই বিদ্যালয়টিকে নদী ভাঙনের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে না পারলে লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু তালেব বসনিয়া বলেন, ‘চরাঞ্চলে পিছিয়ে পড়া শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিদ্যালয়টি বর্তমানে ভাঙন হুমকির মুখে। এটি ভেঙে গেলে চরাঞ্চলে শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, নদী বেষ্টিত তিস্তার চরাঞ্চলে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর শিশু সন্তানদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল আনন্দলোক বিদ্যালয়টি। গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে ২০১৩ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন। সংস্থার রিচ আপ প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় বর্তমানে তিনজন শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৮৯ জন শিশু শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের এরিয়া কোঅর্ডিনেটর আব্দুল মজিদ ও আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ভাঙন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।’

এদিকে গেল কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ২৭ গ্রাম এখন পানির নিচে। আগাম বন্যার ভয়ংকর রূপ এখন সর্বনাশা তিস্তায়। নদীভাঙনে লক্ষ্মীটারী ও কোলকোন্দ ইউনিয়নে ৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে পাঁচ ইউনিয়নে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া ও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী নবনির্মিত শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর ইচলী এলাকায় একটি সেতু ধসে গেছে। এতে করে ওই সড়কে বর্তমানে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটই খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যদিও শুক্রবার সকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করে। বর্তমানে তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর