বন্ধ কারখানা সচল, দেশে বেড়েছে ফেনসিডিলের চালান!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪, ঢাকা | 2023-09-01 19:25:05

মরণ নেশা ইয়াবা রুখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিটের কড়া নজরদারি। তাই ইয়াবা বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন মাদক কারবারি। এরই ফাঁকে রাজধানীসহ সারাদেশে নতুন করে চোরাচালান বেড়েছে ফেনসিডিলের।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, ইয়াবার পাশাপাশি ফেনসিডিলে আসক্তির প্রবণতা বাড়ছে। চাদিহা বেশি থাকায় দামও বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। যেখানে তিন/চারশ’ টাকায় এক বোতল পাওয়া যেত, সেখানে নয়শ’ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র বলছে, ইয়াবার চালান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা পড়লে যে ভয়াবহতার সম্মুখীন হতে হয়, সে তুলনায় ফেনসিডিলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম। তাছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেনসিডিল সহজলভ্য হওয়ায় এই মাদক চালানের দিকেই ঝুঁকছেন মাদক কারবারিরা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের অন্তত ১৯টি সীমান্তঘেঁষা জেলার ওপারে (ভারতে) নতুন করে ফেনসিডিল কারখানা স্থাপন করেছেন মাদক কারবারিরা। আবার দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এমন অনেক ফেনসিডিল কারখানা চালু করা হয়েছে। রাতের আঁধারে সীমান্ত হয়ে সেসব ফেনসিডিল রাজধানীসহ সারা দেশে ঢুকছে। অবশ্য অধিকাংশ চালানই পরে র‌্যাব বা পুলিশের চেকপোস্ট কিম্বা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জব্দ হচ্ছে।

র‌্যাব সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর তারা জব্দ করেছে ৯৭ হাজার ৩৫৮ বোতল ফেনসিডিল। একই সময়ে ২ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ লিটার দেশি মদ জব্দ করে এই এলিট ফোর্স।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭১ বোতল ফেনসিডিল। আর এ বছর প্রথম ৫ মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫ বোতল।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে দেশের সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংস্থাটি ৩৩ হাজার ১১৫ বোতল ফেনসিডিল, ৬ হাজার ৮৭৮ বোতল বিদেশি মদ, ১৬৭ লিটার বাংলা মদ জব্দ করেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, সীমান্তবর্তী ১৯টি জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল আসছে। জেলাগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার।

সংস্থাটি প্রতিবেদনে আরো বলছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, মালদা, কুচবিহারের পাশের ফলাকাটা, মেঘালয়ের তুরা এলাকায় ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে। যার ফলে সহজেই সীমান্ত দিয়ে এই মাদক পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সীমান্তবর্তী একাধিক বিভাগীয় কর্মকর্তা বলছেন, সীমান্তের ওপারে বেশ কিছু ফেনসিডিল কারখানা আছে। সেগুলো গত কয়েক বছর বন্ধ ছিল। ফেনসিডিলের চালানসহ আটক একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে কারখানাগুলো আবার চালু হয়েছে। যার ফলে সহজেই ফেনসিডিল হাতের নাগালে পাচ্ছেন মাদক কারবারিরা।

ইয়াবা ঠেকাতে গিয়ে ফেনসিডিল প্রবেশ বেড়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান শুধু ইয়াবা কেন্দ্রিক হয়, বিষয়টা এমন না। ইয়াবা আর ফেনসিডিলের রুট আলাদা আলাদা। দু’টো দু’ভাবে আসে। তবে এটা ঠিক যে, অনেক সময় যখন একটি মাদকের ওপর নজরদারি বেড়ে যায়, তখন অন্য মাদকের প্রবেশ পথ সহজ হয়। ঝুঁকি এড়াতে মাদক কারবারিরা তখন সহজ পথ বেছে নেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (ঢাকা উত্তর) মোহাম্মদ খোরশিদ আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ফেনসিডিলের চালান বাড়ার বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। আমরা সব মাদক চালানের ওপর নজরদারি সমানভাবে রাখছি। আমাদের কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। আমরা ফেনসিডিলের চালান বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদর দফতরের সিনিয়র এএসপি মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, র‌্যাবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে মাদক অন্যতম। র‌্যাব শুরু থেকেই ইয়াবা বিরোধী অভিযানের ওপর জোর দেয়। গত বছরের ৩ মে থেকে এটা আরও জোরদার করা হয়। এখন যখন ইয়াবার পাশাপাশি অন্য মাদকদ্রব্য আসছে, তখন এটার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর