মেহেরপুর: জেলার স্টুয়ার্ট খাল দখল হয়েছে অনেক আগেই। দুই ধারের জমির মালিকদের ভোগ দখলে খালের আকার আকৃতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন খালের বুক চিরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পুকুর। ফলে এর নামধাম ভুলতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্ম।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার মহব্বতপুর গ্রাম থেকে শুরু করে ভোমরদহ গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালের বুকে শুধুই পুকুর। সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। খালের দুই পাশের জমির মালিকরা প্রথমে পুকুর কাটেন। তাদের দেখাদেখি এলাকার প্রভাবশালীরা খাল দখল করে পুকুর খনন করেন। এতে এলাকাজুড়ে পুকুর খননের কারণে খালের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বর্ষার সময় খালের উপরিভাগের আবাদি জমি জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়।
জনশ্রুতি রয়েছে, ঐতিহাসিক ভাটপাড়া নীলকুঠিরের সর্বশেষ ম্যানেজার ইংরেজ শাসক জন স্টুয়ার্ট এই খাল পুনর্খননের কাজ করেন। তাই একে স্টুয়ার্ট খাল বলা হয়। সিন্দুরকৌটা গ্রামের পাশে (খলিশাকুন্ডি কাছে) মাথাভাঙ্গা নদীতে খালটি উৎপন্ন হয়ে কামারখালী, বাদিয়াপাড়া-মহব্বতপুর, তেরাইল, দুর্লভপুর, ভোমরদহ ও হিজলবাড়ীয়া গ্রাম হয়ে ভাটপাড়ার পাশের কাজলা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ইংরেজদের প্রধান নীল তৈরি কেন্দ্র ভাটপাড়া নীলকুঠির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ইংরেজ শাসক এই খাল পুনর্খনন করেছিলেন। নীল পরিবহনের স্বার্থেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন নীল চাষও নেই, স্রোতস্বিনী¯খালও নেই। কিন্তু জন স্টুয়ার্টের নামটি জানেন এলাকার সব শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা।
তেরাইল গ্রামের বাসিন্দা বামন্দী ইউপি সদস্য মিলন হোসেন বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এই খালে প্রচুর মাছ ধরেছি। স্রোতের টানে খালের এপার-ওপার যাওয়া খুব বিপদজনক ছিল। খালটির প্রস্থ অনেক চওড়া। কিন্তু আজ এমনভাবে দখল করা হয়েছে তাতে খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। এখন শুধুই পুকুর আর পুকুর। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।’ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে প্রশাসনের নীরব ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্টুয়ার্ট খালে পুকুর খননের কারণে আশপাশের মাঠগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে মাঠের নিচু জমিতে আগের মতো চাষাবাদ হচ্ছে না। প্রতি বর্ষা মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু চাষি এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। ফলে দখলকারীদের দৌরাত্মই প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে খালের জমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।