রাজাকারের তালিকা সংশোধন চান মুক্তিযোদ্ধারা

বরিশাল, জাতীয়

জহির রায়হান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বরিশাল। | 2023-09-01 16:45:02

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য ঘোষিত সমালোচিত রাজাকারের তালিকার সংশোধন চান বরিশালের মুক্তিযোদ্ধারা। একই মন্ত্রণালয় থেকে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম থাকলেও আবার রাজাকারের তালিকায় বরিশালের বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা চান এই তালিকার সংশোধন। 

জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় বরিশালে প্রায় হাজারের অধিক রাজাকারের নাম উল্লেখ করে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে উল্লেখযোগ্য গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামও রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে বরিশালের অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী, প্রয়াত ঊষা রানী চক্রবর্তী, আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত, জগদীশ চক্রবর্তী ও মিহির লাল দত্তসহ পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম।

আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের ছেলে এনাম সেরনিয়াবাত বার্তা২৪.কম-কে জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ পরিবারের সদস্যরা কিভাবে রাজাকারের তালিকায় নাম আসে তা বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি ও তার পরিবার। অচিরেই তার বাবার নাম রাজাকারের তালিকা থেকে মুছে ফেলারও জোর দাবি করেন তিনি।

মিহির দত্তের ছেলে শুভব্রত দত্ত বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বাবা ও দাদাসহ পরিবারের ৫ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে ২ জন শহীদ হয়েছেন। রাজাকারের তালিকায় বাবার নাম প্রকাশিত হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত ও হতাশ।

অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিজয়ের ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন আর বেঁচে থেকে লাভ কী? এ তালিকা বাতিল করে রাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতে হবে।

তার মেয়ে ডা. মনীষা চক্রবর্তী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সদ্য ঘোষিত রাজাকারের তালিকাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চক্রান্ত করে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হেয় করা মাত্র। যা দেশ ও জাতির জন্য অপমানজনক। একটি রাজনৈতিক মহল তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের মদদে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই এমন ন্যক্কারজনক তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বরিশাল জেলা সাংগঠনিক কমান্ডার মো. মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকারের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তারপর প্রকৃত রাজাকারের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তবে রাজাকারের তালিকায় বরিশালের যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এসেছে তা পাঠানো রাজাকারের তালিকায় ছিল না। 

তিনি বলেন, এই মনগড়া রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে রীতিমত অপমানিত করেছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাই রাজাকারের তালিকা সংশোধন করে পুনরায় তালিকা প্রকাশ করার দাবি এই মুক্তিযোদ্ধার।

কীভাবে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় প্রকাশ হল? এমন প্রশ্নের জবাবে বরিশাল সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বার্তা২৪.কম-কে জানান, কতিপয় বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংসদে বসে কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার ( ১৭ ডিসেম্বর ) দুপুরে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সদর রোডে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার নেতা-কর্মীরা। সমাবেশ শেষে একযোগে সদ্য ঘোষিত রাজাকারের তালিকায় অগ্নিসংযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী ও তার মেয়ে ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তী ।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে জেলা বাসদের ফকিরবাড়ি রোডের কার্যালয়ে এই তালিকা প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর