সুখ-দুঃখের প্রবাস জীবন

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-02 20:24:01

শারজাহ থেকে: পরিবার-পরিজনের জন্য সুখের সন্ধানে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রবাসে আসেন বাঙালিরা। তাদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলে পরিবার। একটু ভালো থাকা কিংবা সন্তানের শখের খেলনা কেনার সাধ পূরণ করতে পেরেই যেন সুখী তারা। যে লোকটি নিজ দেশে শাহেনশাহ, সেই তিনিই প্রবাসে ছোট একটি চাকরি জুটিয়ে নেন। গাড়ি চালক নতুবা কোনো কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেই যেন সন্তুষ্ট তারা। এমনই কয়েকজন অভিবাসী শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। তাদের প্রবাস জীবনের হালচাল নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

মো. আকিল মিয়া, বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জে। ১৯৮৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে দেশান্তরী হন তিনি। এখন কাজ করছেন চায়নার একটি ফার্নিচার কোম্পানিতে গাড়ি চালক হিসেবে। বেশ কয়েক বছর তিজান ফার্নিচার নামে এই কোম্পানিতে কাজ করছেন তিনি। আকিল মিয়ারা মোট ছয় ভাই। এর মধ্যে তিন জনই থাকেন দুবাইতে। দেশে তাদের ৩৫ বিঘা জায়গা নিয়ে ফিশারিজ রয়েছে। দুটো বাড়িও রয়েছে। দুই সন্তান তার। বড় ছেলে শেখ মো. হাছান মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আর ছোট ছেলে শেখ মো. হোসেন পড়েন মৌলভীবাজার মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ম্যাটস।

একই কোম্পানিতে কাজ করেন মো. শফিউল আলম। চট্টগ্রামের হাটহাজারি থেকে এসেছেন তিনি। সেও দীর্ঘ বছর ধরে শারজাহতে কাজ করেন। তারও দেশে রয়েছে পরিবার পরিজন। ২০০৬ সালে তিনি চায়নার তিজান ফার্নিচারে গাড়ি চালক হিসেবে কাজ নিলেও তার কর্মদক্ষতা ও সততায় মালিক তাকে গাড়ি চালক ও সুপারভাইজর পদে পদোন্নতি দেন। টাকা-পয়সা থাকলেও পরিবার-পরিজনের জন্য মন টানে শফিউলদের। এত পথ পাড়ি দিয়ে পরিবার ছেড়ে থাকাটা বেশ কষ্টেরও বলে জানান তারা।

তিজান ফার্নিচারের শ্রমিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. হযরত আলী ও পাবনার ঈশ্বরদীর মো. লালন। তারা ২০১১ সালে পাড়ি জমান শারজাহ। দুই বন্ধু একসঙ্গে এসে একই কোম্পানিতে কাজ করছেন। কষ্ট হলেও তারা একসঙ্গেই আছেন। তাদের সঙ্গে আরও আছেন পাবনার মো. বাবুল হোসেন, রাজবাড়ীর মনজুর হোসেন বাবু। তারা সবাই শারজাহ, দুবাই, আবুধাবির বিভিন্ন এলাকায় ফার্নিচার নিয়ে যান। অর্ডার অনুযায়ী ফিটিং করে দেন। সারাদিন ঘুরে ঘুরে কাজ শেষে মেলে না বিশ্রাম। রাতে বাড়ি ফিরে শুরু হয় রান্নার কাজ। সবাই ভাগবাটোয়ারা করে শুরু করেন রান্না। আবার রাতে যে জায়গাটিতে ঘুমান সেখানেও সিঙ্গেল বিছানার দোতলা, তিনতলা খাট। অর্থাৎ উপরে একজন, মাঝে একজন আর নিচে একজন। এভাবেই মিলে-মিশে ঘুমান তারা। বাড়ি ভিন্ন ভিন্ন জেলার হলেও এখানে সবাই এক পরিবারের সদস্য। দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের প্রত্যেকের আছে আলাদা পরিবার-পরিজন। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে এসে গন্তব্য অভিন্ন হলেও সবাই যেন একই পরিবারের সদস্য, যেন কত দিনের চেনা!

শারজাহ'র সাজা শিল্প এলাকার আল জুবায়েরে কোম্পানি থেকে ভাড়াভিত্তিক এই বাড়িটিতে তারা থাকেন। এর পাশেই রয়েছে পাকিস্তান থেকে আসা শ্রমিকদের একটি ঘর।

তাদের মুখে শোনা যায় অভিযোগের সুর। অভিযোগ করে তারা বলেন, দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে এসে প্রতারিত হয়েছেন অনেকে। তারা যে কাজের কথা বলে নিয়ে আসেন, পরে দেখা যায় অন্য কাজ। প্রলোভন দেখিয়ে তারা এখানে নিয়ে আসেন। পরে দুর্ভোগে পড়তে হয় প্রবাসে আসা এসব সাধারণ মানুষের। দালালরা যে বেতন ও কাজের কথা বলেন এসে দেখেন তার কোনো কিছুর মিল নেই। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে কোম্পানি ছেড়ে অবৈধ শ্রমিক হয়ে কাজ করেন অন্যত্র। আর ২০১২ সালের পর শ্রমবাজার বন্ধ হওয়াতে বাঙালি শ্রমিকদের সংখ্যা দিন দিন কমছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তাদের প্রত্যাশা দুই দেশের সরকারের সমঝোতায় আবার চালু হোক শ্রমবাজার

এ সম্পর্কিত আরও খবর