থার্ড টার্মিনালে বদলে যাবে শাহজালাল বিমানবন্দর

ঢাকা, জাতীয়

ফাতিমা তুজ জোহরা, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:24:39

সক্ষমতার চেয়ে ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের সেবার মান নিশ্চিত করতে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চালু হতে যাচ্ছে। আগের দুই টার্মিনালের চেয়ে চার গুণ বড় এ টার্মিনাল ভবন বছরে কমপক্ষে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী ধারণে সক্ষম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা যায়, জাপানের মিটসুবিশি এবং ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসং একটি কনসোর্টিয়াম- এর নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের দায়িত্ব পেয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২১ হাজার ৩শ’কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে পাওয়া যাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে পাওয়া যাবে। এটি নির্মিত হলে বছরে আরো অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে।

২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে ১৩ হাজার ৬১০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে একটি পৃথক কার্গো হাউজ স্থাপনসহ প্রকল্প কাজের কিছু অংশ বর্ধিত করায় মোট প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ২১ হাজার ৩শ’কোটি টাকা হয়েছে।

নতুন আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনালটি হবে ২২ দশমিক ৫ লাখ বর্গফুট। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দুটি টার্মিনালে ১০ লাখ বর্গফুট স্পেস রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরের বর্তমান যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি হবে এবং কার্গো ক্যাপাসিটি বর্তমান দুই লাখ টন থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ টন হবে।

নির্মাণ শুরু হলে প্রায় চার বছর সময় লাগবে শেষ করতে। এই হিসেবে ২০২৩ সাল নাগাদ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনতলা টার্মিনাল বিশিষ্ট এই ভবনের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এই ভবনটির নকশা প্রস্তুত করেছেন স্থপতি বোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট ভেনচার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি।

বেবিচক আরও জানায়, থার্ড টার্মিনালে ২৪টি বোডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২টি বোডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে।

এছাড়াও থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে পার্কিয়ের সুযোগ পাবে ১০৪৪টি গাড়ি। বর্তমানে ভিভিআইপিদের জন্য শাহজালালে পৃথক যে ভিভিআইপি কমপ্লেক্স রয়েছে তা ভেঙে ফেলা হবে। তবে তৃতীয় টার্মিনালে পৃথকভাবে স্বতন্ত্র কোনো ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। এর ভিতরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপি স্পেস রাখা হবে।

পাশাপাশি আন্তজার্তিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবার সুবিধাও রাখা হবে থার্ড টার্মিনাল বিমানবন্দরে।

একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও আইনি জটিলতাসহ নানা কারণে তা আটকে যায়। দীর্ঘসূত্রিতা শেষে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) প্রতীক্ষিত থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্থপতি রোহানি বাহারিন

থার্ড টার্মিনালের নকশা প্রস্তুত করেছেন স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট ভেনচার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। 

রোহানি বাহারিন একজন স্বনামধন্য স্থপতি। তিনি সিপিজি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী। তিনি বিশ্বের বৃহৎ সব বিমানবন্দরের নকশা করেছেন। 

এর আগে তিনি সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নকশা প্রস্তুত করেছেন। এছাড়া টার্মিনাল ওয়ান এবং টু-কে আপগ্রেড এবং পুনর্নির্মাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চীনে গুয়াংঝু বায়ুন নিউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ট্র্যাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাকিস্তানের নিউ ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইত্যাদি প্রকল্পের কাজের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুঁড়িয়েছেন খ্যাতি।

এর বাইরে তিনি ভারত, ফিজি, সেশেলস, মরিশাস, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, চীন, কম্বোডিয়া, ব্রুনেই, মায়ানমার এবং ভিয়েতনামের বিমানবন্দরসহ বিশ্বজুড়ে অসংখ্য প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা এবং নকশা তৈরি করেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় শাহজালাল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণসহ কমবে যাত্রীদের ভোগান্তি বলেই আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর