কনকনে শীতে বাড়ছে দরিদ্রদের দুর্ভোগ

ঢাকা, জাতীয়

মো. আকরাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:49:50

হঠাৎ করেই পৌষের শুরু থেকে রাজধানীতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে শীত। আর এতে জবুথবু শহরবাসী। দিন দশেক আগে উত্তরের হিমেল হাওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করে রাজধানীতে। তখন থেকেই স্বাভাবিক জনজীবনের ওপর বিদ্রূপ প্রভাব ফেলতে থাকে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এদিকে শীতের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শীত আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শীত কতদিন থাকবে তা নিয়েও সন্দিহান শহরের অধিকাংশ মানুষ।

শীতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে শহরের ভাসমান, নিচুস্তর ও খেটে খাওয়া মানুষের ওপর। একদিকে, শীতের কষ্ট অন্যদিকে শাকসবজিসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতের কারণে তাদের আয়ও কমেছে। বিশেষ করে ঘরহীন যে সমস্ত মানুষ রাস্তার পাশে, ফুটপাতে, ফুটওভার ব্রিজের, রেলস্টেশনে ঘুমান, তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। সব মিলে প্রকৃতির বিদ্রুপ আচরণে কিছুটা অস্বস্তিতে সবাই।

ফুটপাতের ওপর অস্থায়ী ঘর করে থাকছেন অনেকে, ছবি: সুমন শেখ

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর রায়েরবাজার, জিগাতলা, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, শীতের কারণে কোথাও সড়কের পাশে, কোথাও ফাঁকা জায়গা আগুন জ্বালিয়ে নিজেদেরকে উষ্ণ করার চেষ্টা করছে ছিন্নমূল মানুষ। কোথাও বয়স্ক ও শিশুরা গরম কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশে, ফুটওভার ব্রিজে, ফুটপাতে বসে রয়েছেন, আবার কেউ শুয়ে রয়েছেন। যাত্রীর চাপ না থাকায় রিকশাচালকরাও খোশগল্পে মেতে উঠেছেন। রাস্তার পাশে, লেকসহ বিভিন্ন জায়গাতে ছিন্নমূলের মানুষজন যেসব ছোট ছোট দোকানপাট বসিয়েছেন তাতেও মানুষের চাপ নেই।

মো. আনোয়ার নামের এক রিকশাচালক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই অনেক শীত পড়ছে। শীতের কারণে আগের মতো আমাদের আয় হচ্ছে না। আগে যেখানে রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রিকশা চালাতে পারতাম, রাস্তায়ও মানুষ থাকত। এখন সেখানে সন্ধ্যার পর পরই রাস্তায় মানুষ থাকে না। সবাই বাসায় চলে যায়। কাজের কারণে কেউ কেউ বাইরে থাকে, কিন্তু কাজ না থাকলে সবাই বাসায় থাকে। আগে সন্ধ্যার পর মানুষ ঘুরতে বের হতো, এখন তা কমে গেছে।’

গায়ে পাতলা কম্বল জড়িয়ে ফুটপাতে বসে আছেন এই বৃদ্ধ, ছবি: সুমন শেখ

তিনি আরও বলেন, ‘শীতের মধ্যে আমাদের রিকশা চালাতেও কষ্ট হয়। আগে যত সকালে রিকশা নিয়ে বের হতে পারতাম এখন তা পারি না। প্রত্যেক দিন সব জিনিসের দাম বাড়ছে। আবার শীতের কারণে অন্যান্য খরচও বেড়েছে। সব মিলে শীতের কারণে আমাদের ইনকাম কমে গেছে। কিন্তু খরচ বেশি।’

রাজধানীর ধানমন্ডির লেকের তাকওয়া মসজিদের রাস্তার পাশে তাবুর মতো করে অস্থায়ী বাসা বেধেছে কয়েকজন। তাদের সঙ্গে কথা হলে এক মহিলা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের তো বাড়িঘর নেই, জায়গা জমি নেই। তাই বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে রাস্তার পাশে রয়েছি। কয়েকদিন হয় ঠান্ডা পড়েছে। গত রাতে আবার বৃষ্টি হইছে, যার জন্য আজ দিনেও অনেক শীত। এই শীতে বাচ্চাদের অনেক কষ্ট হয়। আমাদের তো অত টাকা নাই যে, বাচ্চাদের জন্য গরম কাপড় কিনমু। চার-পাঁচ দিন আগে এক লোক এসে একটা কম্বল দিয়ে গেছে সেটার মধ্যেই সবাই কোনোরকম থাকি।

সড়কের পাশে বসে খাবার খাচ্ছেন এই বৃদ্ধা, ছবি: সুমন শেখ

শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ২৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বরা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নীলফামারী অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। ঢাকায় বাতাসের গতি উত্তর-পশ্চিম/উত্তর দিক থেকে ঘণ্টায় ৬-১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।

আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা, ছবি: সুমন শেখ

উল্লেখ, ১৮ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ করে রাজধানীসহ সারা দেশে জেঁকে বসে শীত। ১৯ ডিসেম্বর থেকে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে শীত। মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখা মিললেও অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে। পড়ছে ঘন কুয়াশাও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর