অপেক্ষা বাড়লো আ.লীগের প্রার্থীদের, দুশ্চিন্তায় খোকন

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌল্লাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-14 12:54:31

দেশে এখন কী চলছে? জবাবে এক বাক্যে বলে দেয়া যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। দিন যতই এগোচ্ছে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজধানীর সিটি নির্বাচন।

আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপদে নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন? কিংবা কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন বাগিয়ে আনতে পারবেন কোন প্রার্থী? গেল কয়েকদিনে এটাই হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ইস্যু। প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে টিভির টকশো থেকে পাড়ার চায়ের দোকানে। সময় যত এগিয়ে আসছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, গুঞ্জন পৌষের এই কনকনে শীতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

নৌকার চূড়ান্ত সমর্থন নিয়ে যখন প্রার্থী ও কর্মীদের মধ্যে কৌতূহলের পারদ যখন তুঙ্গে তখন অপেক্ষার প্রহর আরো বাড়ানো হলো দলটি থেকে।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা বসেছিলো গণভবনে। আ. লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। মেয়র পদ প্রত্যাশী, কাউন্সিলর পদে সমর্থন প্রত্যাশীরাও ছিল গণভবনে। সবুজ লনে প্যান্ডেল খাটিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র ও কাউন্সিলরদের বসার ব্যবস্থা করা হয়।

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে বৈঠকে বসেছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড, ছবি:বার্তা২৪.কম
  

সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া সভা শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে এমনটাই আভাস ছিল দল থেকে। অপেক্ষায় সবাই তখন রাত ৮টা ২৫ মিনিটে সবুজ লনের মঞ্চে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদের। তিনি সহজাত ভঙ্গিতে কিছুটা রহস্য রেখে জানিয়ে দেন যে দলের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম আগামীকাল রোববার ধানমন্ডিস্থ দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে প্রেস ব্রিফিং করে জানানো হবে।

কারণ হিসেবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা যারা মেয়র পদে, কাউন্সিলর পদে আমাদের দলীয় ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন তাদের ফরম বৈঠকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমাদের নেত্রী নিজের সোর্স থেকেও খোঁজ নিচ্ছেন, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও নেওয়া হয়েছে। সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করতে আমাদের একটু সময় লাগছে।

ব্যাপারটা যেন-সবকিছুই জানি কিন্তু সময়ের আগে বলবো না!

গণভবনে আগত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চিকেন বিরিয়ানি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

সবুজ লনে স্থাপিত মঞ্চের সামনে ছিল কাউন্সিলররা, ডান পাশে বসেছিলেন উত্তর-দক্ষিণের মেয়র পদ প্রত্যাশীরা। বিকেলে থেকেই কাউন্সিলর ও মেয়র-প্রার্থীরা একে একে গণভবনে প্রবেশ শুরু করেন।

আ.লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণভবনে আসেন আতিকুল ও তাপস, ছবি: বার্তা২৪.কম

মেয়র প্রার্থী ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, শহীদুল্লাহ ওসমানী, ভাষানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেজর (অব.) ইয়াদ আলী ফকির, কুতুবউদ্দিন নান্নু, হেলনা জাহাঙ্গীর, আদম তমিজি হক, খায়রুল মজিদ, মিসেস রেহেনা ফরহাদ আইভি, হাজী আবুল হাসনাতসহ অনেকেই তখন উপস্থিত। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় একসঙ্গে প্যান্ডেলে প্রবেশ করেন উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপরই সবার মনোযোগের আকর্ষণ ঘুরে যায় আতিক-তাপসের দিকে। স্লোগানে স্লোগানে তাদের স্বাগত জানান কাউন্সিলররা। আতিক তার স্বভাবসুলভ হাত নেড়ে কাউন্সিলদের সম্ভাষণের জবাব দেন। আত্মবিশ্বাসী তাপস আতিকের সঙ্গে নির্ধারিত স্থানের দ্বিতীয় সারিতে গিয়ে বসেন। কিছুক্ষণ পর তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন আরেক প্রার্থী নজিবুল্লাহ হিরু। এসময় তাদেরকে দেখে সেলফি তুলতে ছুটে যান অনেক কাউন্সিলর প্রত্যাশী। আতিক-তাপস দুজনেই ধৈর্য নিয়ে কাউন্সিলরদের সেলফি আবদার পূরণ করেন। সময় চলে যায় কিন্তু দক্ষিণের আরেক হেভিওয়েট মেয়র সাঈদ খোকনের তখনো দেখা নেই প্যান্ডেলে!

সাঈদ খোকনের অনুপস্থিতি নানা ধরনের গুঞ্জনকে আরো বাড়িয়ে দেয়। উত্তরে আতিক, দক্ষিণে তাপস এমন স্লোগানে গণভবনকে মাতিয়ে তোলেন উপস্থিত কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এক পর্যায়ে সাড়ে সাতটার দিকে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত সাঈদ খোকন প্যান্ডেলে প্রবেশ করেন। তবে এ প্রবেশ কিছুটা ভিন্ন ছিল! কাউন্সিলরদের ততটা ভিড় নেই তাকে ঘিরে। স্বপ্ন ভঙ্গের ক্লান্তির ছাপ তার চোখেমুখে স্পষ্ট। নির্ধারিত স্থানের সামনের চেয়ারে বসে সৌম্যমুখে গণমাধ্যমে পোজ দেন তিনি।

মনোনয়নের আশায় সবশেষে আসেন সাঈদ খোকন, ছবি: বার্তা২৪.কম

উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস একরকম চূড়ান্ত! বলা হচ্ছে, শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। বিশেষ করে দক্ষিণের মনোনয়নের দৌড়ে এখনো টিকে আছেন সাঈদ খোকন ও নজিবুল্লাহ হিরু। সাঈদ খোকনকেও দেওয়া হতে পারে নৌকার টিকেট। কেননা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই তাকে নির্বাচনের প্রচারণায় নেমে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সাঈদ খোকন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। মনোনয়নের ব্যাপারে তার সে আশা এখনো আছে। যার সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের উপর।

প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আ. লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ২০ সম্ভাব্য প্রার্থী। এর মধ্যে উত্তরে ১২ এবং দক্ষিণে ১০ জন রয়েছেন। এছাড়া দুই সিটির ১২৯ ওয়ার্ডে ১ হাজার ২৯৩ জন কাউন্সিলর পদে আ. লীগের সমর্থন পেতে আবেদন ফরম জমা দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর