খুলনায় ফের আমরণ অনশনে পাটকল শ্রমিকরা

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪. কম, খুলনা | 2023-08-23 01:45:31

বকেয়া মজুরি পরিশোধ, পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, নতুন মজুরি কমিশন গঠনসহ ১১ দফা দাবিতে ফের আমরণ অনশন শুরু করেছে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। প্রথম দফা অনশনের ১৫ দিন পর আবারও এই অনশন কর্মসূচি শুরু হলো।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরের পর থেকে দ্বিতীয় দফায় স্ব স্ব মিল গেটের সামনের সড়কে অনশন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

সরেজমিনে শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, খালিশপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার ও দৌলতপুর জুট মিলসহ কয়েকটি মিলের প্রধান গেটের সামনের বিআইডিসি সড়কে প্রথম দফা আমরণ অনশনের প্যান্ডেলেই আবার দ্বিতীয় দফায় কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। শ্রমিকদের অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রমিক নেতা ও সিবিএ নেতৃবৃন্দ।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, দাবি মেনে নেওয়ার জন্য লম্বা সময় চেয়েছে মন্ত্রণালয়। বারবার তারা সময় চাইছে, তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা আর সময় দিতে চায় না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

আমরণ অনশনে পাটকল শ্রমিকরা

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, শ্রমিকরা দাবি না মানা পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না। অনেক সময় দেওয়া হয়েছে, আর না। শ্রমিকরা এবার দাবি আদায়ের শপথ করেছে। যেকোনো মূল্য‌ে দাবি আদায় করেই তারা ঘরে ফিরবে।

শ্রমিক নেতারা জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তিনদিনের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। রাত ১টার দিকে একে একে খুলনার বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকরা ঘরে ফিরে যান। ওই রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি ১৫ ডিসেম্বর শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেলে বিজেএমসি সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সভার কথা জানান। ওই সভা থেকে ভালো ফলাফল আসতে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের অনশন তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বলেন। ওই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতভর শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের দফায় দফায় আলোচনা চলে। এ সময় নেতারা চাইলেও শ্রমিকরা অনশন ভঙ্গ করতে নারাজ ছিলেন। তবে রাতেই তারা বাড়িতে ফিরে যান। শ্রমিকরা বাড়িতে ফিরলেও অনশনস্থলের প্যান্ডেল সেভাবেই থেকে যায়। ১৪ ডিসেম্বর থেকে একে একে খুলনা অঞ্চলের সকল পাটকলের উৎপাদনে যোগ দেয় শ্রমিকরা। তবে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয় শ্রমিক নেতাদের কাছে। ওইদিন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ভালো কোনো ফল হয়নি। ওই বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশনের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা।

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। বিক্ষোভ মিছিল, শ্রমিক ধর্মঘট, গেটসভা, বিক্ষোভ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ১০ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসে শ্রমিকরা। ওই কর্মসূচি খুলনা অঞ্চলে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে ৮টি পাটকলের শ্রমিকরা অংশ নেন। শুধু যশোরের কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা ওই কর্মসূচিতে অংশ নেননি।

উল্লেখ্য, খুলনা অঞ্চলে মোট রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় রয়েছে সাতটি ও যশোরে দুটি। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। আর যশোরের দুটি জুট মিল হলো কার্পেটিং ও জেজেআই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর