রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে গত এক বছরে মামলা নিষ্পত্তির হার ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সাড়ে ১১ মাসে জুডিশিয়াল আদালতে ৯ হাজার ৪৭৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ২০৭টি। চলতি বছর মামলা নিষ্পত্তির হার ১০৪ শতাংশ। নিষ্পত্তির এই হারকে অভাবনীয় সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিচারক ও আইনজীবীরা।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘মাসিক পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি’ কনফারেন্সে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান তালুকদার।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে সকল ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্টদের মামলার দ্বিগুণ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন। তিনি জানান, বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এবং সংশ্লিষ্ট সকল অফিসের সহযোগিতার হাত অব্যাহত রাখলে আগামীতে নিষ্পত্তি দ্বিগুণ হারে বাড়বে।
অন্যদের মধ্যে কনফারেন্সে বক্তব্য দেন- অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল অধিকারী, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল আমিন ভুঁইয়া, ম্যাজিস্ট্রেসির অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ প্রমুখ। এ সময় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কারাগারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কনফারেন্সের দ্বিতীয় পর্বে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। উত্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহানগরীর বাইরে জেলা জজ আদালতসহ অন্য ১০টি আদালতে চলতি বছর মোট মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৫টি। নিষ্পত্তি হয়েছে তিন হাজার ৬৭১টি মামলা। বিচারাধীন রয়েছে তিন হাজার ৭১৫টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোতে সাজা হয়েছে ৩৩ ভাগ আসামি। আর খালাস পেয়েছেন ৭২ ভাগ আসামি।
এদিকে, এ সময়ের মধ্যে যৌতুক ও পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৭৩১টি। এরমধ্যে আপস হয়েছে ৫৭১টি, ভাঙন ধরা সংসারে জোড়া লেগেছে ২৫২টি এবং বিচার হয়েছে ১৬০টি মামলার। গত এক বছরে যে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে, তার অধিকাংশ মামলায় আপসের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগকারী অসহায় নারীরা তাদের প্রাপ্য অর্থ ক্ষতিপূরণও বুঝে পেয়েছেন।
আদালতে মামলা দায়ের মানে বছরের পর বছর ঘোরাঘুরি ও হয়রানি। তবে এখন সেই দিন শেষ। আদালতে এসে মানুষ এখন স্বল্প সময়ে প্রতিকার পাচ্ছেন –এমন দাবি রাজশাহীর আদালত সংশ্লিষ্টদের। আর এটা সম্ভব হচ্ছে বিকল্প বিরোধে নিষ্পত্তি তথা আপসের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম গত একবছরে রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির মামলাগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে আপসের ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৪১টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ৩৯১টি মামলায় অসহায় নারীরা ৩ কোটি ৭০ লাখ ১১ হাজার ৭২৩ টাকা বুঝে পেয়েছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে যৌতুকের মামলা আপসযোগ্য হওয়ার কারণে। অন্যান্য ফৌজদারি মামলা আপসযোগ্য হলে নিষ্পত্তির পরিমাণ আরও বাড়বে।’
কনফারেন্সে বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগীও অংশ নেন। এদের মধ্যে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পালসার গ্রামের একটি যৌতুক মামলার বাদী সোনিয়া খাতুন বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ থাকার কারণে আমি পালিত পিতার কাছে মানুষ হই। পালিত বাবা আমার চার বছর আগে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী নানা রকম নির্যাতন করতে থাকলে আমি আদালতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা দায়ের করি। ৪ থেকে ৫টি তারিখের মধ্যেই আদালত আমার মামলাটি আপস করে দেয়। আপসের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছি। এ জন্য আমি বিচারক, উকিলসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক। সারা বাংলাদেশে নিষ্পত্তির হারের চেয়ে রাজশাহীর নিষ্পত্তির হার অত্যন্ত সন্তোষজনক। নিষ্পত্তির হার অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়ও বটে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ বছরে রাজশাহীর আদালতগুলোতে মোট ৯৯ হাজার ৩১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৪০৩টি।