রাজশাহীতে গত এক বছরে (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০১৯) ২২৭ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১২১ জন নারী ও ১০৬ শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে এসিডির রিসার্চ ডকুমেন্টেশন অ্যান্ড পাবলিকেশন ইউনিট থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়।
বছরজুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো- গত ১৩ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, ৩০ জানুয়ারি পুঠিয়ার বানেশ্বরে শিশুর সামনে পেট্রোল ঢেলে মায়ের গায়ে দুর্বৃত্তদের আগুন, ৪ ফেব্রুয়ারি পুঠিয়ায় প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণ, ২৪ ফেব্রুয়ারি বাঘায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা, একই দিনে পুঠিয়ায় বিচার না পেয়ে ক্ষোভে লজ্জায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা।
৪ মার্চ বাঘায় ইসলামী জলসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা, ২১ মার্চ গোদাগাড়ীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, ২ এপ্রিল বাঘায় শিশু বলাৎকারের অভিযোগ, ৪ এপ্রিল তানোরে চান্দুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, ২৭ এপ্রিল যৌতুকের দাবিতে বাগমারায় গৃহবধূকে হত্যা, মে মাসে তানোর উপজেলার প্রকাশনগর আদর্শ গুচ্ছগ্রামে শাশুড়িকে বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর মরদেহ মাটিতে পুতে রাখা হয়।
২৪ মে গোদাগাড়ীতে লাঠির আঘাতে ৩ মাসের শিশু হত্যা, ২৩ জুন মোহনপুরে ধর্ষণের পর গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা, একই দিনে মোহনপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা, ২৭ মে একই উপজেলায় ছেলের হাতে মা খুন, একই মাসে পুঠিয়ায় ৭ বছরের শিশুকে জবাই করে হত্যা, ১৯ জুন তানোরে গলায় ফাঁস দিয়ে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা, ১৫ জুন বাগমারায় জাম দেওয়ার প্রলোভনে শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ২ জুলাই পুঠিয়ায় গভীর রাতে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, ৯ জুলাই গোদাগাড়ীতে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মা খুন, ১৭ জুলাই দুর্গাপুরে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নির্যাতন করে গর্ভপাত, ১০ আগস্ট মহানগরীর সোনাদিঘীর মোড় এলাকায় রুয়েটের এক শিক্ষকের স্ত্রী বখাটেদের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার, ১৯ আগস্ট মোহনপুরে স্ত্রী ডিভোর্স দেওয়ার ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ, ২৯ আগস্ট রাতে নগরীতে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে নারী শ্লীলতাহানির শিকার হন।
৪ সেপ্টেম্বর মোহনুপরে স্কুলছাত্রীর ঘরে ঢুকে ধর্ষণ, গত ৫ সেপ্টেম্বর একই উপজেলায় প্রেমিকের বাড়িতে বিষপানে প্রেমিকার আত্মহত্যা, ১৬ সেপ্টেম্বর চারঘাটে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, ১৮ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, ২৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার, ২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর ধরমপুরে রাবি শিক্ষকের বাসায় ওই শিক্ষকের ভাইয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
২০ অক্টোবর বাগমারায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, ১ নভেম্বর নগরীর কাটাখালিতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা, ১৪ নভেম্বর নগরীতে ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র খুন, একই দিনে চারঘাটে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা, ২১ নভেম্বর রামেক হাসপাতালের তিনতলা থেকে লাফিয়ে নারীর আত্মহত্যা, ২৮ নভেম্বর নগরীতে মেয়ে সহপাঠীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে কলেজছাত্রকে মারধর।
বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিনে গোদাগাড়ীতে পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাই, ভাবিসহ চারজনকে পিটিয়ে জখম, ১২ ডিসেম্বর রাজশাহীতে চলন্ত বাসে যুবতীকে যৌন হয়রানি, ১৮ ডিসেম্বর মোহনপুরে প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের চেষ্টা, ২৮ ডিসেম্বর মহানগরীতে নাতির পিটুনিতে দাদি গুরুতর জখম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জেলায় এক বছরে ১২১টি নারী নির্যাতনের মধ্যে হত্যা ১১টি, হত্যার চেষ্টা ২৬টি, রহস্যজনক মৃত্যু ৩টি, ধর্ষণ ৯টি, ধর্ষণের চেষ্টা ৫টি, আত্মহত্যা ২৬টি, আত্মহত্যার চেষ্টা ১১টি, অপহরণ ৫টি, যৌন হয়রানি ১৭টি, নিখোঁজ ৩টি, এসিড নিক্ষেপ ১টি এবং অন্যান্য ঘটনা ঘটে ৪টি।
জেলায় গত এক বছরে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ১০৬টি। এর মধ্যে শিশু হত্যা ৯টি, হত্যার চেষ্টা ৪টি, ধর্ষণ ১৭টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১২টি, অপহরণ ২০টি, আত্মহত্যা ১০টি, আত্মহত্যার চেষ্টা ৫টি, যৌন হয়রানি ১৬টি, নিখোঁজ ৭টি ও অন্যান্য ঘটনায় ৬ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়।
জেলায় এক বছরে শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মহানগরীর থানাগুলোতে সংঘটিত হয়েছে ২৫টি এবং মহানগরীর বাইরের থানাসমূহে সংঘটিত হয়েছে ৮১টি নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে বাগমারায় ১৬টি, বাঘায় ১৮টি, পুঠিয়ায় ১৩টি, মোহনপুরে ১২টি, চারঘাটে ৪টি, গোদাগাড়ীতে ৮টি, পবায় ১টি, তানোরে ১টি এবং দুর্গাপুরে ৮টি শিশু নির্যাতনে ঘটনা ঘটে।
১২১টি নারী নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মহানগরীর থানাগুলোতে সংঘটিত হয়েছে ৪৮টি এবং মহানগরীর বাইরের থানাসমূহে সংঘটিত হয়েছে ৭৩টি নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে মোহনপুরে ১০টি, বাগমারায় ১১টি, বাঘায় ১৮টি, পুঠিয়ায় ১২টি, গোদাগাড়ীতে ৭টি, পবায় ১টি, দুর্গাপুরে ৫টি, চারঘাটে ১টি এবং তানোরে ৮টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।