বাড়ছে পরকীয়া, ভাঙছে সংসার!

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 08:54:29

মেহেরপুর: সর্বনাশা প্রেম ও পরকীয়ার ঘটনা মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছে পরকীয়ায় জড়িত প্রেমিক-প্রেমিকারা। ভেঙে যাচ্ছে সোনার সংসার ও রঙিন স্বপ্ন।

মূলত সংসারে স্বামী বা স্ত্রীর অনুপস্থিতি, দাম্পত্য কলহ বা নিজেকে নিঃসঙ্গ ভেবেই তৈরি হচ্ছে পরকীয়া। এসব কারণে সামান্য পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম ও নিজেকে সিঙ্গেল দাবি করে বিয়ের প্রলোভনে অনৈতিক সম্পর্কগুলো বাড়ছে। বিশেষ করে ফেসবুক ও মোবাইল ফোন পরকীয়া করাকে খুবই সহজ করে দিয়েছে।

এদিকে এসব পরকীয়ার ঘটনায় তেমন কোনো তদন্তই হয় না। সামাজিক মধ্যস্থতায় কয়েকজন সংসারে ফিরে গেলেও সিংহভাগ হারিয়েছে তাদের সংসার। অনেকেই বেছে নিয়েছে আত্মহত্যার পথ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জুলাই বাহাগুন্দা গ্রামের রাফিজুল ওরফে লাল মিয়া চুয়াডাঙ্গার এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে অসামাজিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় স্থানীয়রা দেখে ফেলে। এসময় রাফিজুল পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে তার প্রেমিকা। বিবাহিত হয়েও রাফিজুল নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে এই সম্পর্ক গড়ে তোলে।

১০ জুলাই স্ত্রীর পরকীয়া সইতে না পেরে হিজলবাড়ীয়া গ্রামের লাল্টু মিয়া (২৫) নামে এক যুবক বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। স্ত্রী সুমি অন্য পুরুষের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে লাল্টু মিয়া আত্মহত্যার এই পথ বেছে নেয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

একই দিনে শহড়াবাড়িয়ার ঠাণ্ডুর ছেলে স্বপন কড়ুইগাছি গ্রামের আজিজুল হকের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সালমার সঙ্গে গোপন অভিসারে লিপ্ত অবস্থায় স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে পুলিশে দেয়। স্বপনের ঘরে রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান।

১১ জুলাই শ্যালকের প্রেমিকার সঙ্গে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে করমদি গ্রামের আশরাফুল নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। তার সংসারে রয়েছে স্ত্রী কনা ও ছেলে সাব্বির। এ ঘটনায় আশরাফুল ও তার শ্যালকের নামে অপহরণের মামলা দায়ের করেছে ওই ছাত্রীর পরিবার।

গত ১৯ জুন পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্বামীর অকথ্য নির্যাতন সইতে হয় দেবীপুর গ্রামের গৃহবধূ ফরিদাকে। এক পর্যায়ে ফরিদা আত্মহত্যা করেন।

১১ জুন গাংনীর ভিটেপাড়া মাঠে একটি লিচু বাগানে ফুর্তি করতে গিয়ে বেরসিক জনতার হাতে গণধোলাই খেয়েছেন প্রাক্তন প্রেমিক জুটি হিন্দা গ্রামের বাবর আলীর ছেলে সেন্টু ও কুলবাড়িয়া গ্রামের এক সেবিকা। সেন্টু বিবাহিত হলেও নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে ওই সেবিকার সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন।

প্রেমিক-প্রেমিকার বিয়েতে পরিবারের অমত থাকায় বিষপান করেছে এক প্রেমিক যুগল। তবে সৌভাগ্যক্রমে প্রেমিকা প্রাণে বেঁচে গেলেও মৃত্যু হয়েছে প্রেমিকের। ঘটনাটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামে। হতভাগা প্রেমিকের নাম সাদ্দাম হোসেন (২৩)। তিনি কাজিপুর গ্রামের মৃত ছাদিমান হোসেনের ছেলে।

৩০ জুন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামে অসামাজিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় গ্রামবাসী করমদি বহলপাড়ার এলাহী বক্সের ছেলে শিপন মিয়া (২৬) ও কল্যাণপুর গ্রামের মাসুদ রানার মেয়ে সুরভী আক্তার মালাকে আটক করে পুলিশে দেয়। স্বামী বাইরে থাকায় স্ত্রী মালা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে বলে জানায়। স্থানীয় পর্যায়ে সালিশ করে মালা স্বামীর সংসারে ফিরে গেলেও শিপন মিয়াকে তার স্ত্রী ছেড়ে চলে যায়।

গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রমজান আলী বলেন, মানুষের নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার কারণে পরকীয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আত্মীয়তার সর্ম্পক। অপসংস্কৃতি চর্চায় মানুষের চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে স্বামী-স্ত্রীরা বিদ্যমান সর্ম্পকের বাইরে গিয়ে অন্য মানুষের সঙ্গে সর্ম্পক তৈরি করছে।

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সবাইকে ভাবাচ্ছে। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর