ফের পাটকল শ্রমিকদের অনশন, অসুস্থ অর্ধশতাধিক

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা | 2023-08-31 14:56:45

বকেয়া মজুরি পরিশোধ, পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, নতুন মজুরি কমিশন গঠনসহ ১১ দফা দাবিতে ফের আমরণ অনশন শুরু করেছে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। আমরণ অনশনে অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক পাটকল শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) অনশনের তৃতীয় দিনে শ্রমিকরা অসুস্থ হতে শুরু করলে প্রথমে তাদের অনশনস্থলেই স্যালাইন দেওয়া হয়। পরে কয়েকজন শ্রমিকের অসুস্থতা বাড়লে তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) ভর্তি করা হয়েছে।

খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন

খুলনাঞ্চলের ৯টি পাটকলের মধ্যে খালিশপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার ও দৌলতপুর জুট মিলের প্রধান গেটের সামনের বিআইডিসি সড়কে প্রথম দফা আমরণ অনশনের প্যান্ডেলেই আবার দ্বিতীয় দফায় কর্মসূচি পালন করছে। রাতভর শীত উপেক্ষা করে অনশনস্থলে অবস্থান করছে হাজারো শ্রমিক। আমরণ অনশনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জুট মিলে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। শ্রমিকদের অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শ্রমিক নেতা ও সিবিএ নেতৃবৃন্দ।

শ্রমিক নেতারা বলেন, অভুক্ত থেকে আমরণ অনশনে অংশ নেওয়ায় ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বিভিন্ন মিল থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে অনশনস্থলে অসুস্থ শ্রমিকদের স্যালাইন দেওয়া হলেও গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, যেকোনো মূল্যে শ্রমিকরা এবার মজুরি কমিশনের বাস্তবায়ন চায়। অসুস্থ হয়েও শ্রমিকরা অনশনস্থল থেকে কোথাও যায়নি। জীবনের বিনিময়ে হলেও তারা তাদের দাবি পূরণ করতে চায়।

স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণা আর তীব্র শীতের দাপটে আমরণ অনশনে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনশনে থাকা অধিকাংশ শ্রমিকই দুর্বল। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জানা যায়, এর আগে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। বিক্ষোভ মিছিল, শ্রমিক ধর্মঘট, গেটসভা, বিক্ষোভ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ১০ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসে শ্রমিকরা। ওই কর্মসূচি খুলনা অঞ্চলে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে ৮টি পাটকলের শ্রমিকরা অংশ নেন। শুধু যশোরের কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা ওই কর্মসূচিতে অংশ নেননি। অনশনের ৩দিন পর ৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তিনদিনের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। রাত ১টার দিকে একে একে খুলনার বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকরা ঘরে ফিরে যান। ওই রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি ১৫ ডিসেম্বর শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেলে বিজেএমসি সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সভার কথা জানান। ওই সভা থেকে ভালো ফলাফল আসতে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের অনশন তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বলেন। ওই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতভর শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের দফায় দফায় আলোচনা চলে। এ সময় নেতারা চাইলেও শ্রমিকরা অনশন ভঙ্গ করতে নারাজ ছিলেন। তবে রাতেই তারা বাড়িতে ফিরে যান। শ্রমিকরা বাড়িতে ফিরলেও অনশনস্থলের প্যান্ডেল সেভাবেই থেকে যায়। ১৪ ডিসেম্বর থেকে একে একে খুলনা অঞ্চলের সকল পাটকলের উৎপাদনে যোগ দেয় শ্রমিকরা। তবে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয় শ্রমিক নেতাদের কাছে। ওইদিন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ভালো কোনো ফল হয়নি। ওই বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশনের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা।

অনশনস্থলে স্লোগান দিচ্ছে শ্রমিকরা

উল্লেখ্য, খুলনা অঞ্চলে মোট রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় রয়েছে সাতটি ও যশোরে দুটি। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। আর যশোরের দুটি জুট মিল হলো কার্পেটিং ও জেজেআই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর