আবরণহীন বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হচ্ছে বানর

ময়মনসিংহ, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-08-30 16:28:11

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামে বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে মধুপুরের শালবন। উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন রাঙ্গামাটিয়া ও নাওগাঁওয়ে দুই হাজার ৮৬৩ দশমিক ১৪ একর এলাকাজুড়ে রয়েছে এ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। একসময় এই বনে হরিণ, মেছোবাঘ, ভালুক, হনুমান, সজারু, শিয়াল, খরগোশসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। সময়ের সাথে সাথে গাছ কেটে বন উজাড় করায় মোটামুটি বন্যপ্রাণী শূন্য এই বনাঞ্চল। যদিও প্রায় সাড়ে তিনশ বানরের পদচারণায় বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব টিকে আছে কোনোমতে। কিন্তু এখন সেটিও হুমকির মুখে।

গত এক সপ্তাহ ধরে বানরগুলোর অনেকটাই ছুটোছুটি শূন্য। কারণ বনবিভাগের নীতিমালা অনুসরণ না করে বনের ভেতর আবরণবিহীন তার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হচ্ছে বনের বানর।

জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আশপাশে ও বিট অফিসে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন। ওই সময় তিনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বন এলাকার ভেতরে সিলভারের তারের পরিবর্তে কভারিং কেবল দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানার নির্দেশ দেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ সেই নির্দেশ না মানায় প্রতিদিনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঝলসে যাচ্ছে বানরের শরীরের বিভিন্ন অংশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ কয়দিনে অন্তত দশটি বানরের হাত-পা, বুক-পিঠ এবং মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে গেছে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে। আহত হওয়া বানরগুলোর ক্ষত স্থানে ইতোমধ্যে পচনও ধরেছে।

আব্দুল হালিম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'বনের ভিতর বিদ্যুৎ সংযোগ হবে, তাহলে কেনো বন্যপ্রাণীর কথা মাথায় রাখা হলো না? এটা কি লাইন ডিজাইনারের দায়িত্ব অবহেলা না? যদি দায়িত্ব অবহেলা হয়ে থাকে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি দ্রুত সিলভারের তার পরিবর্তন করে বন এলাকায় কভারিং তারের মাধ্যমে লাইনগুলো টানার ব্যবস্থা করা হোক।'

অভিযোগ উঠেছে, ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিসকে বিষয়টি জানালেও এ ব্যাপারে শুরুতে তারা কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। এমনকি বিদ্যুতের লাইন ডিজাইন করার সময় বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি।

তবে বানরগুলোর ঝলসানোর খবর পেয়ে সম্প্রতি ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিস থেকে সন্তোষপুর বনাঞ্চলে বিদ্যুতের লাইনে লোক দেখানো কাজ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিট অফিস থেকে বিদ্যুতের ৯টি খুঁটি পর্যন্ত সিলভারের দুই তারের মাঝখানে তিন ফুট করে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েই লাইনের নিরাপত্তার কাজ শেষ করা হয়েছে। আর এইচটি লাইনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া আর কিছু করা হয়নি। বনের ভেতরে বিদ্যুতের কভারিং তার না দেওয়ায় বন্য প্রাণীগুলো ঝুঁকির মধ্যেই রয়ে গেছে বলে মনে করছে বন বিভাগ ও স্থানীয়রা।

সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান খান বলেন, 'কভারিং তার ব্যবহার না করে শুধু সিলভারের দুই তারের মাঝখানে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে প্রাণীদের ঝুঁকি রয়েই গেছে।'

তবে এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) অনিতা বর্ধন জানান, এইচটি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বানররা যাতে আহত না হয়, সেভাবেই বিদ্যুতের লাইনের কাজ চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর