দশ বছরে দেশের বিরাট পরিবর্তন এসেছে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 16:28:02

দশ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘দশ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এ দেশের মানুষ ভালো-কিছুর স্বপ্ন দেখা ভুলেই গিয়েছিল। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণকালে তিনি এসব কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে আর সেই সেতু দিয়ে গাড়ি বা ট্রেনে সরাসরি পারাপার করতে পারবে, এটা ছিল মানুষের স্বপ্নেরও অতীত। আমরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। তিন ভাগের দুই-ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রায় অর্ধেকাংশ এখন দৃশ্যমান।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন রেলপথ নির্মাণ, নতুন কোচও ইঞ্জিন সংযুক্তি, ই-টিকেটিং এবং নতুন নতুন ট্রেন চালুর ফলে রেলপথ যোগাযোগে নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ১২২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। দেশের সকল জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাতালরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করার পর চন্দ্রা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন-রংপুর এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে।’

আরও পড়ুন: আ.লীগ মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নয়: প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রতি বছর ২ কোটি ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপ-বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৮৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করেছি। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ অতিক্রম করেছে।’

কর্মসংস্থানের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য তরুণ সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। চলতি মেয়াদে আমরা দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। এরইমধ্যে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের জন্য আসছেন।’

তিনি বলেন, ‘ কেউ যাতে গৃহহীন না থাকে সেজন্য আমরা একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভূমিহীন ও নদী ভাঙনে উদ্বাস্তুদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমান বহরে ৬টি নতুন ড্রিম লাইনার যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: ‘শতভাগ সফল হয়েছি দাবি করব না, চেষ্টার ত্রুটি ছিল না’

তিনি আরও বলেন, ‘এরইমধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে। ৯৭ ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছেন। টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা ও মহেশখালীতে মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসজাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিগত ১১ বছরে ২০ হাজার ১০২ জন নতুন চিকিৎসক এবং ২১ হাজার ৬৯৭ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ কোটিরও বেশি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। দেশের সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা ৪জি’র পর ৫জি প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর