অন্য যেকোনো গণপরিবহনের তুলনায় নিরাপদ হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ ট্রেনে ভ্রমণ। কিন্তু ট্রেনের যাত্রীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আচমকা চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কাজ করলেও সহসাই রোধ করা যাচ্ছে না ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা।
রেল সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২ হাজার ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ফলে দরজা জানালা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাথরের আঘাতে যাত্রীদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে।
ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে প্রীতি দাশ নামের এক প্রকৌশলী নিহত হবার পর, এ নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। গত বছর নিহত হয় রেলেরই এক (টিটি) পরিদর্শক। তাছাড়া গত বছরের মে মাসে জিসান নামে একটি শিশুর আহত হবার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনায় আসে রেলে পাথর নিক্ষেপের বিষয়টি।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস কুমিল্লার গোমতী ব্রিজ এলাকায় আসলে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙে ৪ যাত্রী আহত হয়।
তাছাড়াও গত বছর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী উত্তরাঞ্চলে ভ্রমণের সময় তাকে বহনকারী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন তার বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘এই ধরনের জঘন্য অপরাধ যারা করবে তাদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিতে হবে।
ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যাত্রীদের মধ্যে জানতে চাইলে নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করা ইয়াসিন আরাফাত বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। মাঝে মধ্যেই ছুটিতে বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। আরামদায়ক ও নিরাপদ হওয়ায় বেশিরভাগ সময়ই যাওয়া আসা করা হয় ট্রেনেই। তবে বিভিন্ন সময় দেখি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় অনেক যাত্রী আহত-নিহত হন। এসব ঘটনা আমাদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করছে।’
এদিকে রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা হলে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তাছাড়া পাথর নিক্ষেপে যদি কারও মৃত্যু হয় তাহলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
রেল সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৯২৯ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার। সারাদেশে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৩৩২টি এবং সর্বমোট স্টেশন রয়েছে ৪৬০টি । রেলের দুই বিভাগের ২০ জেলার মধ্যে ৭০ থেকে ৭২টি স্থানকে পাথর নিক্ষেপের স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থান থেকেই পাথর নিক্ষেপের ঘটনাগুলো ঘটছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে রেলপুলিশের মাঠে কাজ করা এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা সাধারণত নিরিবিলি এলাকাগুলোতে হয়ে থাকে। দেখা গেছে রেল লাইনের আশপাশে যে সব বাড়ি ঘর আছে সেখান থেকে কেউ একজন রেল লাইনের পাথর নিয়ে নিক্ষেপ করে দিল। অনেক সময় দুষ্টামির ছলে অনেকে এ কাজ করে থাকে। একটা ট্রেন ৭০ কিলোমিটার গতিতে চলছে ওই সময় কেউ একজন পাথর নিক্ষেপ করলে তাকে আর ধরার মতো নজরদারি থাকে না।
পাথর নিক্ষেপের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে রেল বিভাগ জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম-মহাপরিচালক (অপারেশন) মোছা. রশিদা সুলতানা গণি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, পাথর নিক্ষেপ দেখার দায়িত্ব আমাদের আরএনবি, রেল নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশের। লিফলেট দিয়ে এবং পাথর নিক্ষেপের স্পট চিহ্নিত করে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করে ওই সব এলাকায় দেখানো হচ্ছে এবং মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। তবে প্রচার-প্রচারণা করার কারণে আগে থেকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কিছুটা কমেছে । তবে এখন কিছু মাদকাসক্ত আছে যারা এই কাজ করে থাকে। আগে পাথর নিক্ষেপ প্রতিদিনই ঘটতো কোনো না কোনো ট্রেনে। তবে বর্তমানে এটি কিছুটা কমেছে ।