হুমকির মুখে নবনির্মিত শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-21 22:02:00

রংপুর: নদী ভাঙনের তীব্রতা কমতে না কমতেই গতিপথ পরিবর্তন করেছে তিস্তা। রংপুরের গঙ্গাচড়ার শঙ্করদহের গতিপথ বদলে নতুন চ্যানেলে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার মূল স্রোতধারা। এতে করে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে নবনির্মিত শেখ হাসিনা তিস্তা সেতুটি। এছাড়া অর্থহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় নদীর ডান তীরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামোগুলো।
 
গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে প্রায় ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। দীর্ঘদিনের আন্দোলন দাবির ফসল এই সেতুকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত রংপুর ও লালমনিরহাটসহ উত্তরের কোটি মানুষ। কিন্তু সেই আনন্দ উচ্ছ্বাস এখন হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ঢাকা পড়েছে। 
 
সম্প্রতি তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে গঙ্গাচড়ার তিস্তাপাড়ের মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষে উঠে নতুন করে স্বপ্ন দেখার আগেই আবারও ক্ষতির সম্মুখীন তারা। এবার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের সাত কিলোমিটার উজানে শঙ্করদহে গতিপথ বদলেছে তিস্তা। এতে শত শত ঘর-বসতি, ফসলি জমি, স্কুল-কলেজসহ অনেক কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার চেয়েও বড় ক্ষতি আর অনিশ্চয়তায় পড়েছে নবনির্মিত তিস্তা সেতুসহ ডান-তীরের শহর রক্ষা, বন্যা-নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন রোধে গড়া হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন অবকাঠামো।
 
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শঙ্করদহে নদী থেকে নির্বিচারে বালু তোলাই এই বিপর্যয়ের কারণ। এরই মধ্যে শংকরদহ বিদ্যালয়ের পাশের মসজিদটি তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। সাউদপাড়া মাদরাসা যাওয়ার রাস্তা, আনন্দোলোক বিদ্যালয় সংযোগ সড়ক, শংকরদহ চরের সংযোগ সড়কে জোড়া ব্রিজ, মহিপুর-কাকিনা সড়কের শঙ্করদহ স্কুলের পাশে ব্রিজের সংযোগ সড়ক পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। এখন চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় স্থানীয়রা নিজেরাই বাঁশ, গাছ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
 
লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান অব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, ভাঙনসহ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর গতিপথ পরিবর্তনে সৃষ্ট নতুন চ্যানেল বন্ধ করার জন্য পাইলিং দিয়ে যে চেষ্টা করছে তাতে লাভ হবে না বলে মনে করেন তিনি।
 
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, ‘পানি চলাচল আমরা বন্ধ করতে না পারলে পুরাতন শঙ্করদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে যেতে পারে। আর এমনটি ঘটলে নতুন তিস্তা সড়ক সেতু বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’
 
এদিকে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া একক প্রচেষ্টায় তিস্তা নদীর প্রবাহ রোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
 
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘নদী যেন নতুন চ্যানেলে শিফট হয়ে না যায় এবং নতুন ব্রিজটা রক্ষা করতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
 
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বরাদ্দের অভাবে তিস্তা নদী বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান মেরামত করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন। তিনি জানান, এই মুহূর্তে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। গত বছর বন্যায় তিস্তা নদীর তীররক্ষা বাঁধের ২০টি ও ক্যানেল বাঁধের পাঁচটি স্থান পানির তোড়ে ভেঙে গিয়েছিল। বন্যার পর পরই নদী ড্রেজিং, বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মেরামতের জন্য ১৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। তবে এখনো কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের বেশ কটি স্থান এখন পর্যন্ত মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর