বৈষম্য নিরসনে অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করতে হবে

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-20 04:17:22

বৈষম্য নিরসনে ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে সাউথ এশিয়ান অ্যালায়েন্স ফর পোভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)। একইসঙ্গে স্যাপির পক্ষ থেকে দেশীয় কর রাজস্ব সচল ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ‘বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও স্যাপির সদস্য সচিব রোকেয়া কবীরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মেদ খান, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মুশতাক আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দীন খান, অক্সফামের ম্যানেজার মঞ্জুর রশিদ, শিশু সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বাংলাদেশের বৈষম্য ও অসমতা পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, ‘মাত্র ৩০০জন ধনীর আয় বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সমান। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ, লজ্জাকর ও অশ্লীল। দেশে বিপদজনক মাত্রায় অসমতা বাড়ছে। জাতীয় সংসদেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। আশির দশক পর্যন্তও সংসদে আইনজীবী, শিক্ষকসহ মধ্যবিত্তদের আধিক্য ছিল। কিন্তু এখন ৬০ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী। এই অবস্থার পরিবর্তনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘সামাজিক অসমতা ভয়াবহতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আদিবাসী, দরিদ্র কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অধিকারহীন করে রাখা হয়েছে। তারা নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। যে কারণে তারা কথা বলতেও ভয় পান। দেশে শোষণ-বঞ্চনা বাড়ছে। আগে যারা এমন বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বলতেন, তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। যেটা আরো ভয়াবহ। কারণ এ সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।

সূচনা বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্বের মনীষীরা দারিদ্র ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও বৈষম্যের বিরুদ্ধে হয়েছিল। তাই রাষ্ট্র-সরকার ও নাগরিক সমাজ সকলকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’

বৈষম্য ও দারিদ্র নিরসনে স্যাপির সুপারিশে বলা হয়, ‘নারীদের জন্য বৈষম্য ও শোষণমূলক নয় এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু ও জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, নূন্যতম মজুরি আইন বাস্তবায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্যমূলক বেতন পরিহার করতে হবে। জলবায়ু বিপর্যয় রোধ ও জীবাশ্ম জ্বালানির অযৌক্তিক প্রভাব দূর করতে হবে। নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিগত ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে। কিন্তু এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেখানে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য। বৈষম্য নিরসনে আধিপত্য প্রতিহত করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর