কর্মসংস্থান বাড়াতে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-18 22:39:41

ত্রুটিপূর্ণ ও মান্দাতা আমলের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি যথাযথ ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের অভাবে প্রতিনিয়তই যুবকরা বেকার হচ্ছেন। তার সঙ্গে স্থায়ী আবাসন, জীবন ও জীবিকার চ্যালেঞ্জের কারণেও কর্মসংস্থাহীন হয়েছে পড়ছে চার শ্রেণীর যুবগোষ্ঠি। এই যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এখনি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। গ্রামে ও শহরের বৈষম্য দূর করতে হবে। তাহলেই দেশের উন্নতি হবে।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে 'প্রান্তিক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা' শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপের সহযোগিতা করেছে দ্যা এশিয়া ফাউন্ডেশন, এসডিজি বাস্তবায়নের নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ।

বক্তারা বলেন, আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক। এ শিক্ষাপদ্ধতি বেকারত্ব তৈরি করছে। এর থেকে বের হতে বাস্তব ও জীবনমুখী শিক্ষা প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

তারা বলেন, কোন খাতে কত গ্র্যাজুয়েট দরকার, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। পরিকল্পনা ছাড়াই গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য বেকারত্ব কমছে না। পরিসংখ্যান থাকলে সেক্টর অনুযায়ী চাহিদা মোতাবেক গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা যেতো, ফলে বেকারত্ব ঘুচানো যেতো।

সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, নাইম রাজ্জাক ও রুমিন ফারহান এমপি এবং সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং নির্বাহী পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ|

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে এখন ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী সুবিধাবঞ্চিত ২ কোটি যুবক রয়েছে। যা মোট শ্রমগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে নতুন করে ৩ কোটি যুব-জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। কিন্তু সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি প্রকৃতি যেভাবে চলছে তাতে, ঊর্ধ্বে ১ কোটি ৪৯ লাখ, অর্থাৎ অর্ধেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর বেকার থাকবে অর্ধেক যুবক। কারণ যুব-জনগোষ্ঠীর এখন জীবন ও জীবিকা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান চ্যালেঞ্জে মোকাবেলা করছেন।

সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেন, প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে আমরা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কথা বলি। সেটা না বলে, কতজনের নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে সেই হিসাব করতে হবে। বাংলাদেশে একটি বাধ্যতামূলকভাবে যুবকর্মসংস্থান প্রকল্প বা একটি প্রোগ্রাম নেওয়ার আহবানও জানান তিনি।

এসময় মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুর্নীতির দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ রয়েছে। ফলে এইএসসি, অনার্স এবং মাস্টার্স পাশের পর বেকারের হার বাড়ছে। তারা কেউ কেরানির চাকরি করতে চায় না। সবাই অফিসার হতে চায়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। সময়ে উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।

রুমিন ফারহানা এমপি বলেন, উচ্চ শিক্ষিত ৫০ শতাংশ যুবক বেকার। এ সরকার ক্ষমতায় এসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গুরুত্ব দিয়েছে, শিক্ষার মানে নয়। এজন্য বেকারত্ব তৈরি হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যুব সমাজের কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মূলত জীবন চক্রের চ্যালেঞ্জ। যুব সমাজের মধ্যে যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর, তাদের চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে যে নতুন তিন কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায়, এজন্য অবশ্যই উদ্ভাবনী চিন্তা প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর