রংপুরে হাইটেক পার্ক নির্মাণে অগ্রগতি নেই

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-09-01 21:30:56

দেড়শ' কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুরে হাইটেক পার্ক হচ্ছে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের জন্য নগরীর খলিশাকুড়িতে আট একর খাস জমি বন্দোবস্ত দেয় রংপুর জেলা প্রশাসন। এ বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। অথচ গেল আড়াই বছরে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আর কোন কাজই হয়নি।

হাই-টেক পার্ক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রংপুরে কর্মসংস্থান হবে ৫ হাজার তরুণ-তরুণীর। এখানকার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা। এ প্রকল্পের মধ্যে থাকা বাকি জেলাগুলোতে নির্মাণ কাজ শেষের পথে। আবার কোথাও কোথাও নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু রংপুরে ২০১৮ সালে হাই-টেক পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। বহুল প্রত্যাশিত এ পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ রংপুরবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের খলিশাকুড়ি এলাকায় হাই-টেক পার্কের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫৯ একর জমি। পিলার (খুঁটি) আর কাটা তার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এক সময়ে কৃষি কাজে ব্যবহার হওয়া সেই জমি। রাস্তার ওপর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে প্রকল্পের তথ্য সংকলিত একটি সাইনবোর্ডও। দীর্ঘ দিন ধরে কাজের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা স্থানীয় কৃষকরা আবারো প্রকল্পের জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছে।

 রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিশাকুড়ি এলাকায় এই পার্ক হবে 

এদিকে প্রকল্পের জন্য আর জমির প্রয়োজন হলে তা দিতে প্রস্তুত ব্যক্তি মালিকাধীন জমির মালিকরা। তবুও নির্মাণ কাজে বিলম্ব না করে দ্রুত চাষাবাদি এই জমির বুকে স্থানীয়রা দেখতে চান মাথা উঁচু করা স্বপ্নপূরণের হাই-টেক পার্ক।

খলিশাকুড়ির এলাকার কলেজ পড়–য়া আশরাফুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এই হাই-টেক পার্কের নকশা আর জমি অধিগ্রহণ ছাড়া বাকি কোন কিছুতেই কোন অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। আমাদের অনেক আশা, পার্ক বাস্তবায়ন হলে এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এলাকার উন্নয়ন হবে। তথ্য প্রযুক্তিগত সেবা আরো উন্নতি ও সহজ হবে।

কৃষকরা জানান, আড়াই ধরে পার্কের জমি পড়ে আছে। কোন কাজ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমরা জমিতে চাষাবাদ করছি। প্রকল্পের এই জমি অধিগ্রহণ করার আগে অনেক গরীব কৃষক এখানে চাষাবাদ করত। তারা তো অসহায়, অভাবী। পার্কের কাজ শুরু হলে কেউ জমিতে চাষাবাদ করবে না।

এদিকে প্রযুক্তিনির্ভর এই হাই-টেক পার্ক প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়ন, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের উত্তরণ ও বিকাশে সুযোগের দুয়ার খুলে দেবে বলে জানান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম।

হাইটেক পার্ক বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান হবে ৫ হাজার তরুণ-তরুণীর

তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, হাই-টেক পার্ক বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের যুবকরা কাজের সুযোগ পাবে। তারা মেধা দিয়ে এ কাজ করবে। তথ্যের প্রসার ও আইটি বিভাগ আরও প্রসারিত ও জনবান্ধব হবে। ফলে বাংলাদেশে সফটওয়্যার শিল্পের আরও বিকাশ ঘটাবে। জাতীয় রাজস্ব আয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে এ পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গেল বছরের আগস্টে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন হাই-টেক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালক হোসনে আরা বেগম। ওই সময় নির্মাণকাজ বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘প্র্রকল্পটি ভারত সরকারের সহায়তায় হচ্ছে। আমাদের সকল কাগজপত্র বারবার পাঠাতে হয় এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে। আবার সেখান থেকে চলে যায় ইন্ডিয়ান হাই-কমিশনে। এসব প্রসেসের জন্য প্রকল্পের কাজে ধীরগতি এসেছে। তবে ২০১৯ সালেই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।’ তার এই আশ্বাসের পর আর পাঁচ মাসে পেরিয়ে গেলেও কোন অগ্রগতি নেই প্রকল্প বাস্তবায়নে।

এদিকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চাষাবাদি এই জমির বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে স্বপ্নপূরণের ভবনগুলো। এখানে নকশানুযায়ী তিনটি ভবনের মধ্যে একটি হবে স্টিল স্ট্রাকচারে তৈরি সাত তলা বিশিষ্ট মাল্টিটেনেন্ট ভবন। এছাড়া দুইটি তিন তলা বিশিষ্ট ক্যান্টিন ও এ্যাস্ফিথিয়েটার ভবন (স্টিল স্ট্রাকচার) এবং ডরমিটরি ভবন (আরসিসি) থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল সারাদেশের জেলা পর্যায়ে ১২টি হাই-টেক পার্ক প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে রংপুর হাই-টেক পার্কের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার বরাদ্দ দিয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ভারত অর্থায়ন করছে বাকি ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর