যুবলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি শাহীন আহম্মেদ। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। কিন্তু মামলার এজহারে তার নাম দেয়া হয়েছে শুধু শাহীন। মিল নেই বাবার নামেও।
পুলিশ ঠিকাদার শাহীনের পরিবর্তে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সান্ধ্যকালীন এমবিএ'র শিক্ষার্থী শাহিনুর রহমান শাহীন। শুধু নামের মিল থাকায় বিনা দোষে জেল খাটছেন তিনি।
শাহিনুর রহমানের বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই দফায় প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন শাহিনুর রহমান। তবে জেলে থাকার কারণে অংশ নিতে পারেননি ইন্টার্নশিপে।
এদিকে, শাহিনুরের পরিবার পুলিশকে প্রমাণ দিয়েছে, তার ছেলে মামলার আসামি শাহীন আহম্মেদ নয়।
শাহিনুরের বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নুর মুহাম্মদ সরদার জানান, পুলিশ ঐদিন সন্ধ্যায় পাড়ার মোড়ে যাকে পেয়েছে তাকেই তুলে নিয়ে গেছে। এরপর বাছ-বিচার না করেই তাকে রাসেল হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে। সেখানে আটকদের মধ্যে তার ছেলে শাহিনুরও ছিল।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল থেকেই আমার ছেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিল। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার সময় পাড়ার মোড় থেকে তাকে আটক করে হয়। ঐদিন সে যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিল সে প্রমাণও পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও শাহিনকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়।
মামলার বাদী পক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে- গ্রেফতার শাহিনুরকে তারা আসামি করেনি। তারা আসামি করেছে ঠিকাদার শাহীন আহম্মেদকে।
মামলার বাদী মনোয়ার হোসেন রনি বলেন, ‘আমরা এজাহারে যাদের নাম দিয়েছি, তাদের মধ্যে জেলে থাকা শাহীন নেই। অথচ পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তার ছেলে শাহিনুরকে এজাহার নামীয় আসামি করে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমরা পুলিশকে বার বার পরিষ্কার করেই বলেছি, এই শাহিনুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়। কিন্তু পুলিশ তাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আসামির তালিকায় নাম দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।’
বিচারের দাবিতে ছাপানো ব্যানার পোস্টারেও পাওয়া গেছে অন্য শাহীনের ছবি। আসল আসামি শাহীনের বাড়ি শিরোইল কলোনী পশ্চিম পাড়ায়। সেখানে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে শাহীন আহম্মেদ পলাতক। তার স্ত্রী হাবিবা খাতুনের দাবি, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করে মামলায় জড়ানো হয়েছে তার স্বামীকে।
তবে এতকিছুর পরও অভিযোগপত্র থেকে শাহিনুর রহমানের নাম বাদ দেয়নি পুলিশ। পুলিশের দাবি- তারা সঠিক আসামিকে গ্রেফতার করেছে। মামলাটি আরো গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর রাজশাহী রেল ভবনে টেন্ডার নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সদস্য সানোয়ার হোসেন রাসেল। ওই ঘটনায় মামলার পর শাহিনুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর চন্দ্রিমা থানার উপ-পরিদর্শক রাজু আহমেদ বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেন।
তবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার হুমায়ন কবীরের মোবাইলে কয়েকদফা কল করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
এদিকে, পুলিশের তদন্তের ভুলে একজনের স্থলে আরেকজনকে গ্রেফতার এবং জেল খাটালে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ।
তিনি বলেন, রাজশাহীসহ সারাদেশেই সম্প্রতি এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এনিয়ে পুলিশ প্রশাসনের তেমন মাথাব্যথা নেই। আর ভুক্তভোগী কোনমতে ছাড়া পেলেই জীবন নিয়ে বাঁচে এমন অবস্থা। কিন্তু একজনের স্থলে আরেকজন জেল খাটলে তার পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা উচিত।