গাইড বইয়ের উপর বাড়তি নির্ভরতায় ফল বিপর্যয়

, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 05:49:06

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপি-এ ৫ দুটিই কমেছে। তবে পাসের হার কমলেও মোটেও হতাশ নন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষাবিদরা বলছেন, গাইড বইয়ের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতায় ফলাফল নিম্নমুখী হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ক্লাস রুমে লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এবার ১০টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেলেও চলতি বছর জিপিএ ৫ এর সংখ্যা ৩০ হাজারেরও নিচে। এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯ হাজার ২৬২ জন। এবার ১০ বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন। পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পাসের হার কমায় মোটেও হতাশ হইনি। বরং আমরা আনন্দিত যে, লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সঙ্গে মান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ ধারাটা অব্যাহত থাকবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ক্লাস রুমে সঠিকভাবে লেখপড়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা সঠিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কিনা তা নজরদারিতে আনা দরকার। সেগুলো না করে পরীক্ষার ফলের দিকে নজর রাখলে শিক্ষার জন্য উপকারি হবে না। 

শিক্ষার মান ক্রমশ নীচে নামছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার মান নামছে, উঠছে না। পরীক্ষামুখী শিক্ষা গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষামুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। ক্লাসে সঠিকভাবে পড়াতে হলে কোচিংয়ে যেতে হবে না।

সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন হলে ফল বদল হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সব সময় একই প্রক্রিয়ায় খাতা মূল্যয়ন করা উচিত। গুজব আছে, পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়ানো কমানোর নির্দেশনা থাকে। খাতা মূল্যয়নের নির্দিষ্ট কোন মান নেই। মান উঠানামা করছে। এ বিষয়টিতে শৃঙ্খলা আনা উচিত।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গাইড বইয়ের উপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এর ফলে অনেকে কাঙ্খিত ফল করতে পারেনি। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, ইংরেজিতে যত সংখ্যক পাস করে ফল তেমনই হয়। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি।

খাতার নাম্বার বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ থেকে এবার মন্ত্রণালয় বেড়িয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক শিক্ষাকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি এবার পরীক্ষার খাতা মূল্যয়নে নাম্বার বাড়িয়ে দেয়া কিংবা কমিয়ে দেয়ার কোন নির্দেশনা ছিলনা। ফলে শিক্ষকরা নিরপেক্ষভাবে খাতা দেখেছে।

এমসিকিউ এর নাম্বার কমায় অনেকে ভালো ফল করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা মুখস্ত নির্ভর হয়ে পড়ছে। ফলে মুখস্তের বাইরে কিছু আসলে তারা বুঝে লিখতে পারে না। এতে করে ফলাফল খারাপ হচ্ছে। যারা ফেল করেছে তাদের আগামীবারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

গত ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলে গত ১৩ মে পর্যন্ত। আর ১৪ থেকে ২৩ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন ছাত্র ও ৬ লাখ ১৮ হাজার ৭২৭ জন ছাত্রী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর