লতাপাতায় প্যাঁচানো কয়েক কোটি টাকার গাড়ি, উদাসীন কর্তৃপক্ষ

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:17:44

লক্ষ্মীপুর: যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ আর স্থান সংকুলানের অভাবে লক্ষ্মীপুরে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধে জব্ধ হওয়া দুই হাজারেরও অধিক গাড়ি। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। আদালত পাড়া ও পুলিশ লাইন্সসহ জেলার ৫টি থানায় খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে এসব গাড়ি। এছাড়া ধুলা-বালিসহ লতাপাতায় প্যাঁচানো থাকায় মুছে যাচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত।

তবে এগুলো সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কারোর কোনো উদ্যোগ নেই। এক কথায় বলা চলে এ ব্যাপারে উদাসীন কর্তৃপক্ষ। তাইতো মামলা জটিলতার কারণে নিলামও করা যাচ্ছে না। যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব।

অথচ দিন দিন বিভিন্ন অপরাধে জব্দকৃত গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলছে। ফলে জায়গার অভাব দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে মামলার আলামত হিসেবে যানবাহনগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় কোর্ট পুলিশ এবং থানা পুলিশকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তারা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিসহ নিলাম ও সঠিক মালিকের কাছে যানবাহন গুলো হস্তান্তরের দাবি জানান।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জব্ধ হওয়া আলামতের মধ্যে তিন স্তরের গাড়ি রয়েছে। আর তা হচ্ছে মামলার আলামত, চোরাইকৃত গাড়ি ও কাগজপত্র বিহীন গাড়ি। এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে প্রাইভেটকার, ট্রাক, পিকাপ ভ্যান, মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেল। তবে বেশি সংখ্যকই চোরাইকৃত মোটরসাইকেল। এসব গাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা। জব্দ হওয়া এসব গাড়ি মামলার আলামত হিসেবে গুরুত্বসহ সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।
খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর অরক্ষিত অবস্থায় রাখতে হচ্ছে। যার কারণে বেশির ভাগ গাড়িই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল হয়ে যাচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন। আইনি জটিলতার কারণে অনেক মালিকই ছাড়িয়ে নিতে পারেন না তাদের গাড়ি। তাই দিনের পর দিন এভাবে জমে গাড়ির স্তুপ। আর আইনি জটিলতার কারণেও ওয়াকসন দেওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিনে পুলিশ লাইন্স ও থানা এলাকার মালখানায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জব্দকৃত গাড়ি ও মামলার আলামত। লতাপাতা আর আবর্জনার স্তুপে কোনটির হেডলাইট, আবার কোনটির ব্রেক-শো, কোনটির বা ব্যাক লাইট দেখা যাচ্ছে। এর সবগুলোই বিভিন্ন অপরাধে জব্দ হওয়া মামলার আলামত (যানবাহন)।

এছাড়া স্থান সংকটের কারণে আদালত পাড়ায় খোলা স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়িগুলো (আলামত) স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এসবের মধ্যে নামীদামি ব্র্যান্ডের গাড়িও রয়েছে। তবে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলার আস্তরণে বোঝার উপায় নেই কোনটা সচল আর কোনটা অচল। বছরের পর বছর অযত্নে পড়ে থাকায় কিছু গাড়ির কাঠামো বা চ্যাসিস ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই। নিরাপত্তার অভাবে গাড়িগুলোর বিভিন্ন পার্সও চুরি হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জব্ধকৃত এক গাড়ির মালিক বলেন, ‘মামলায় জামিনে মুক্ত হয়েছি। তবে মুক্ত করতে পারিনি আমার দামি মোটরসাইকেলটি। মামলা জনিত কারণে আলামত হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে এটি। তবে গাড়িটির আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি। কারণ যখন এটি ফেরত দেওয়া হবে তখন আর তা ব্যবহারের উপযোগী থাকবে না।’

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা জজ কোর্টের আইজীবী অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন মঞ্জু জানান, জব্ধকৃত যানবাহন নিয়ে যদি কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকে তা হলে ছড়িয়ে না রেখে একত্রিত ভাবে যত্ন সহকারে রাখলেই হয়। অযত্মের কারণে মামলার আলামত ও সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসন, সরকারি আইনজীবীর সমন্বয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান তিনি।

কোর্ট মালখানার ইনচার্জ মোহাম্মদ গফফার খান জানান, ৫০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখনো ১০০টি মামলা চলমান রয়েছে। জব্দকৃত গাড়িগুলোর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিলামে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া স্থান সংকটের কারণে দীর্ঘদিন রোদ-বৃষ্টির মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে গাড়িগুলো।

লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন জানান, মামলা জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে এগুলো নিলাম করা যাচ্ছে না। তাছাড়া স্থান সংকটতো রয়েছেই। তাই যত্নও নেওয়া যাচ্ছে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

জেলা বিআরটিএ সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এ সব বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ার পর ইন্সপেকশন চাওয়া হয়। ওই ক্ষেত্রে জব্ধকৃত গাড়িগুলো রেজিস্ট্রেশনের যোগ্য না হলে পরে নিলামে দেওয়া হয়। এতে সরকার রাজস্ব পায়। এছাড়া আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় কোনো গাড়ির ইঞ্জিন নষ্ট হলে তা রেজিস্ট্রেশনের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর