সুন্দরবন ভ্রমণ করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-22 16:13:09

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। বাংলাদেশে ইউএসএইড মিশনের পরিচালক ডেরিক ব্রাউন তার সঙ্গে ছিলেন।

২৬-২৮ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী সফরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার হারবেড়িয়ায় বাংলাদেশ বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া তিনি সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় অবদান রাখা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তাপুষ্ট কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

সুন্দরবনে গবেষণা এবং যৌথ অংশীদারিত্ব কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে রাষ্ট্রদূত মিলার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বন বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

সফরকালে রবার্ট মিলার যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডক্টরেট শিক্ষার্থীর সঙ্গে কটকা পরিদর্শন করেন। ওই শিক্ষার্থীর বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস অর্থায়ন করেছে। তারা জনপ্রিয় কটকা ট্রেইল ধরে কিছু অংশে হাইকিং করেন এবং সুন্দরবনে পর্যটনের ভূমিকা ও এর প্রভাব সম্পর্কে অবগত হন।

সফরের শেষ দিনে রাষ্ট্রদূত মিলার স্থানীয় নাগরিক সংস্থা ওয়াইল্ড টিম লিমিটেডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তাদের কাছ থেকে অবগত হন যে, ২০১৮ সালে শেষ হওয়া ইউএসএইড’র দেড় কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ ‘বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন অ্যাক্টিভিটি (বাঘ)’ কর্মসূচির পর কীভাবে বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং ইউএসএইড গত বছরের ২২ মে ঘোষণা করে যে, ইউএসএইড’র ‘বাঘ’ কর্মসূচি ও সুন্দরবন রক্ষার সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এ বনে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা স্থিতিশীল হয়েছে এবং সামান্য হলেও বেড়েছে। ২০১৫ সালের আনুমানিক ১০৬ টি থেকে ২০১৮ সালে তা আনুমানিক ১১৪টিতে উঠেছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে ছিল গ্রামের ‘টাইগার রেসপন্স’ দলের সদস্য, বাঘ দূত, বাঘ স্কাউটস, সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠন এবং কমিউনিটি টহল গ্রুপের সদস্যরা। ইউএসএইড’র বাঘ এবং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুড (সিআরইএল) কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে স্থানীয় এ সংগঠনগুলোকে সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করেছে। সিআরইএল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বনের ৫১২ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ম্যানগ্রোভ গাছের চারা রোপণে সহায়তা করা। রোপিত গাছের প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে কাঁকড়া, বাইন, সুন্দরি, কেওড়া ও গোলপাতা।

প্রতিবেশ সংরক্ষণ উদ্যোগে সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রে সবুজ বনানী, মূল্যবান বাস্তুসংস্থান এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জন্য একই ধরনের উপকার বয়ে আনে। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা জোরদার করে এবং এমন বাস্তুসংস্থানকে সুরক্ষা দেয় যা কেবল বাংলাদেশই নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীর ভালো থাকার জন্যই জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং উভয় দেশের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আগামী ২ ফেব্রয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবসের প্রাক্কালে বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ অরণ্যে রাষ্ট্রদূত মিলারের সফর সুন্দরবন এবং এর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে। বিশ্ব জলাভূমি দিবস বিশ্বজুড়ে জলাভূমিগুলো পরিবেশ সংরক্ষণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা তুলে ধরে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুসংস্থানগুলোর সুরক্ষাকে এগিয়ে নিতে জলাভূমিগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ এ দিবস তা জোরের সঙ্গে প্রকাশ করে। সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এটি জলাভূমির গুরুত্ব প্রদর্শনের জন্য এক উপযুক্ত স্থান। এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিপদ থেকে সুরক্ষা দিতে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। এছাড়া সুন্দরবন বেঙ্গল টাইগার, মাস্ক্ড ফিনফুট, ইরাবতী ডলফিন, নোনা পানির কুমির এবং আরও অনেক বিপন্ন বা ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রাণীর আবাসস্থল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর