মাঘের শুরুতে এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজেছিল রাজশাহীর জনপদ। তারপর থেকে চলছে টানা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তা না কাটতেই মধ্যমাঘে ফের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে পদ্মাপাড়ের জনপদে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। তবে কৃষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ের বৃষ্টি আমের মুকুলের জন্য উপকারী। এ বৃষ্টিতে দ্রুত ফুটবে আমের মুকুল।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ভোর রাত থেকে রাজশাহীর আকাশে মেঘের আনাগোনা। ভোরে সূর্যের দেখা না মিললেও কিছুটা আলোকিত ছিল।
তবে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। চারিদিকে নেমে আসে অন্ধকার। সকাল পৌনে ৮টার দিকে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, তারা ভোর ৬টায় ওয়েদার রিডিং নেন। তখন বেশ স্বাভাবিক ছিল তাপমাত্রা। কিন্তু বৃষ্টি শুরুর পর তাপমাত্রার পারদ কমতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, বুধবার ভোর ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
তবে সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে তা জানাতে পারেননি রাজশাহী আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা। তা জানাতে তাদের আরো সময় লাগবে বলে সকাল ৯টার দিকে বার্তা২৪.কমকে জানান আরেক উচ্চ পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম।
এদিকে, শীতের সকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। সকালে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিককে।
তাদের একজন আমিনুর রহমান। ভোরে জেলার বানেশ্বর এলাকা থেকে বাই সাইকেলে করে শহরে কাজের সন্ধানে বের হন তিনি। ১২ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে নগরীতে প্রবেশের পরপরই বৃষ্টিতে আটকা পড়েন তিনি।
আমিনুর বলেন, সকালে মেঘ মেঘ ছিল, তবুও কাজ হবে ভেবে বাড়ি থেকে বের হলাম। কিন্তু শহরে ঢোকার পরপরই বৃষ্টিতে আটকা পড়েছি। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে আজ কাজ নাও পেতে পারি। কাজ না পেলে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।
শুধু শ্রমিকরা নন, বিপাকে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও। বৃষ্টিতে সাত বছর বয়সী শিশু সন্তান আকিবকে নিয়ে সাগরপাড়া মোড়ে নির্মাণাধীন ভবনের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন সাজেদা বেগম।
সকাল ৯টার দিকে তিনি বলেন, সকালে তাড়াহুড়ো করে ছাতা না নিয়েই বেরিয়ে পড়েছি। এখন বৃষ্টিতে ভিজছি। বাচ্চার সাড়ে ৮টায় স্কুল। ৯টা বাজলেও এখনো দাঁড়িয়ে আছি। বেশি ভিজলে শীতে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়বে। আজ আর স্কুলে যাওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে না।
এছাড়া নগরী ঘুরে রিকশাচালক, বাস-ট্রেনের জন্য স্টেশনগামী যাত্রী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়।
তবে মধ্যমাঘের এ বৃষ্টি আমের মুকুলের জন্য উপকারী হবে বলছেন কৃষক ও বিশেষজ্ঞরা। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. আলীম উদ্দিন বলেন, এখন মুকুল ফোটার একদম উপযুক্ত সময়। ঠিক এমন সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় অঙ্কুরিত হতে থাকা মুকুল ঝটপট ফুটবে। এতে আমের ভালো ফলনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দেবে।