জাবিতে শিক্ষকদের জন্য আরো ৭ টি বাস, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

, জাতীয়

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-11 06:49:55

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে শিক্ষকদের জন্য আরো নতুন ৭ টি বাস সংযুক্ত করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সঙ্গে দৈনন্দিন যোগাযোগের জন্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়ার পরেও শিক্ষকদের জন্য নতুন ৭ টি বাস ক্রয়কে ভালভাবে গ্রহণ করেনি শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে সবগুলো বাস ক্রয় করা হয়েছে ভর্তি পরীক্ষা থেকে অর্জিত শিক্ষার্থীদেরই প্রদানকৃত অর্থ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া ফেসবুক গ্রুপ ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’-এ শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নতুন ৭ টি বাসের মধ্যে ২৮ সিটের দুইটি এসি মিনি বাস এবং ১৬ সিটের ২ টি ও ৭ সিটের তিনটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এগুলো শিক্ষকদের জন্য ব্যবহৃত হবে বলে শিক্ষার্থী ও পরিবহন অফিসে কথা বলে জানা গেছে। এ কারণে ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ছাড়াই বাস উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে পাঠানো উদ্বোধনের ছবিটিতে হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষকদের দেখা গেলেও একজনও শিক্ষার্থী সেখানে ছিলোনা।

এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান নাঈম বিশ্বাস লেখেন, যে জাতি তার শিক্ষকদের সম্মান দিতে জানে না সে জাতি আজীবন মূর্খদের কাতারে রয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের সমস্যা হলো তারা শুধু নিবেন, দেবেন না মোটেই, এ কেমন বিচার?

অফিস আওয়ার নয়টা পাঁচটা, তবে দেড়টার বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক ঢাকা চলে যান প্রতিদিন। আর বিভাগ উন্নয়ন ফি অন্যায্য, শিক্ষাকে রাষ্ট্র মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ব্যয়ভার ছাত্রদের বহন করবার কথা না, বিভাগের উন্নয়ন ফি ছাত্ররা কেন দিবে? ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির টাকার একটা ছোট অংশ থেকেই সে ব্যয়ভার বহন করা যায়, শুধু অভাব সদিচ্ছার।

মিজানুর আপন নামের অপর এক ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী লেখেন, ওনাদের জন্য কয়েকটা হেলিকপ্টারও কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

আলম শেখ নামে এক সাবেক শিক্ষার্থী লেখেন, ছাত্র ছাত্রীদের বাসের ব্যবস্থা না করে শুধু ব্রাহ্মণ সমাজের জন্য করেন,,,, তাহারা আগে বাঁচুক।

সাইদুর রাহমান রাফি নামের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে একটি ভাঙাচুরা এম্বুলেন্স রাখার অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন।

জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা নজির আমিন চৌধুরী জয় একটি পোস্টে লেখেন, আমরা উপাচার্যকে বলেছিলাম ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রির টাকা দিয়ে, গাদাগাদি করে ছাত্রদের যাতে ঢাকা যেতে না হয় তার জন্য বাস ক্রয় করা হোক ।

ফর্ম বিক্রির টাকা দিয়ে বিভাগ গুলোর উন্নয়নের জন্য টাকা দিতে,যাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভাগ উন্নয়ন ফি না নিতে হয়। উনি কিছুই করলেন না। বরং, ১০টায় ক্যাম্পাসে এসে ১.১৫ তে ঢাকা ফিরে যাওয়া শিক্ষকদের জন্যে বাস কিনলেন। পুনশ্চঃ ফর্ম বিক্রির আয়কৃত টাকার একটা বড় অংশ ভর্তি পরীক্ষায় ডিউটি দেয়ার সম্মানি হিসেবে শিক্ষকরাই পান।

এই পোস্টের পরদিন জাবি ছাত্র ইউনিয়ন ফর্ম বিক্রির টাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য বাস না কিনে শিক্ষকদের জন্য ক্রয়কে ‘নিন্দনীয়’ বলে বিবৃতি প্রকাশ করে।

নজিরের পোস্টের নিচে নাহিদ তাসনিয়া জাহান রিয়া লেখেন, হেই মিয়া! ক্যাম্পাস কি আমাদের নাকি। যাদের ক্যাম্পাস তাদের জন্য কিনবে না ত কি করবে? তুমি আমি তাড়াতাড়ি পড়াশুনা করে বাইর হয়ে যাব। আমাদেরকে দিয়ে কোন লাভ আছে? তুমি আসলেই একটা প্রিয় ছাত্র।

এম ডি মাঈন উদ্দিন নামের এক ছাত্র লেখেন, আমার মনে হয় আমরা স্টুডেন্টরা টাকা তুলে হলে ও আমাদের প্রাণপ্রিয় সন্মানিত অফিসিয়াল শিক্ষকদের একটা বাস কিনে উপহার দেওয়া উচিত। এই ক্যাম্পাস তো স্টুডেন্টদেরই আবাসিক ক্যাম্পাস সবাই হলে থাকতে পারবো আমরা। কিন্তু বেচারা শিক্ষিত শিক্ষকের তো বৌ,বাচ্ছা আছে আর তাই বাসায় যাওয়ার ও তাড়া আছে।

অয়ন আজাদ নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, মাত্র দুইটা বাস!! প্রত্যেক টিচারের জন্য একটা করে এসি বাস কেনার জোর দাবি জানাই।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদক শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধতা প্রত্যক্ষ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের অর্থে আমাদের জন্য বাস না কিনে যাদের জন্য পর্যাপ্ত বাস রয়েছে তাদের জন্য ক্রয় করা হলো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষক বাস অধিকাংশ সময় খালি থাকে।

এই ব্যাপারে একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জুলকারনাইন শিকদার ফেসবুকে লেখেন, ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি বিভাগ উন্নয়ন ফি থাকবে কি থাকবে না সেটা নির্ধারণ করতে প্রতিটি বিভাগের ছাত্র সংসদ প্রতিনিধি বা ছাত্রদের সবার মতামত জরুরি। এছাড়া বিভাগ উন্নয়নের টাকা কিভাবে ব্যয় হবে তারও একটি নীতিমালা আছে। কোনো শিক্ষক চাইলেন আর তহবিল থেকে মনের মতো খরচ করলেন বিষয়টি তেমন নয়। এর জন্য বিভাগীয় সভায় পূর্বানুমোদন নিতে হয়। এবার ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার থেকে অর্জিত তহবিল দিয়ে যে সাতটি গাড়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রয় করেছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। এগুলো কেবল শিক্ষকদের জন্যই নয়। বিশ্ববিদ্যালয় তার যেকোন প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করাবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর