দেশের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য চিংড়ি খাত আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। টানা ১০ বছর ধরে এ পণ্যের রফতানি কমছে। ১০ বছরের মধ্যে গত অর্থবছরে সর্বনিম্ন রফতানি হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই চলতি অর্থবছরে প্রথম ৬ মাসে বিগত বছরের তুলনায় রফতানি কিছুটা বেড়েছে। এতে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন রফতানিকারকরা।
খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিগত অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার টনের বেশি চিংড়ি রফতানি বেড়েছে।
জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে চিংড়ি রফতানি করে আয় হয় ২ হাজার ৫৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২ হাজার ২৪৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৭০০ কোটি ২২ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও ২ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার চিংড়ি রফতানি হয়।
সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চিংড়ি রফতানি আয় ছিল ২ হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা। তখন রফতানি হয় ২৯ হাজার ৬ কোটি ৮২১ মেট্রিক টন চিংড়ি। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সবচেয়ে কম চিংড়ি রফতানি হয়েছে।
অপরদিকে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৬ মাসে ১ হাজার ৫১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার চিংড়ি রফতানি হয়েছে। এ সময় চিংড়ি রফতানি করা হয় প্রায় ১৮ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন।
খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তা এটিএম তৌফিক মাহমুদ জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি হয়। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৬ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন চিংড়ি। সুতরাং এ অর্থবছরের শুরুর ৬ মাসেই প্রায় ২ হাজার টন চিংড়ি বেশি রফতানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব বাজারে চিংড়ির চাহিদা বাড়লেও এ খাতে বাংলাদেশের রফতানি আয় প্রতিনিয়ত কমে। বিশ্ববাজারে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের চিংড়ির দখল ৪ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশে নেমে এসেছে। আর এ সময় ধারাবাহিকভাবে চিংড়ি রফতানি কমেছে ৩৩ শতাংশ। একই সঙ্গে দেশে চিংড়ির উৎপাদনও কমেছে ২৮ দশমিক ৩৫ ভাগ।
গত ৫ বছর আগে বিশ্ববাজারে যেখানে চিংড়ির চাহিদা ছিল ৪৩ লাখ মেট্রিক টন, তা এ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখ মেট্রিক টনে। কিন্তু দেশে চিংড়ি উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এছাড়া গুণগত মান সংকটের কারণেও পিছিয়ে পড়ে সম্ভাবনাময় এ খাতটি। বিশেষ করে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি গলদা চিংড়ির মাথা বিচ্ছিন্নকালে বাড়তি অংশ রেখে দেয়। এতে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে। যা কোনোভাবেই বিদেশি ক্রেতারা পছন্দ করেন না।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক পরিচালক এস হুমায়ুন কবীর জানান, ২০২১ সালের মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বা ১৩ হাজার কোটি টাকা চিংড়ি খাত থেকে আয় করার টার্গেট নেয়া হয়েছিল। তবে তা মাত্র দুই বছরে অর্জন করা সম্ভব না। কিন্তু নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন চিংড়ি রফতানিকারক ও এ অঞ্চলের উৎপাদনকারীরা। এ অর্থবছরের শুরুতে যেভাবে চিংড়ি রফতানি বেড়েছে, এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে টার্গেট পূরণ করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, বিশ্বের মোট চিংড়ির চাহিদার ৭৭ ভাগই এখন হাইব্রিড প্রজাতির ভেন্নামি চিংড়ির দখলে। প্রতিবেশী দেশগুলো দ্রুত এ চিংড়ির উৎপাদন শুরু করলেও বাংলাদেশ তা পারেনি। বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ির চাহিদা বিশ্ববাজারে এখন মাত্র ১১ ভাগ। ফলে প্রতিনিয়ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমছে। তাই এখনই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত চিংড়ি রক্ষায় চাষাবাদ থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বিশ্ববাজারে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।