প্রাথমিকের সাড়ে ১৫ লাখ শিশুর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,রংপুর | 2023-08-25 17:52:40

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে প্রাথমিকে উপবৃত্তি প্রকল্পের পাঁচ বছরের মেয়াদ। নতুন শিক্ষা বছর শুরু হয়ে গেলেও প্রকল্প নবায়ন বা এ ধরনের কোনো নতুন প্রকল্প গৃহীত হয়নি। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পশ্চাৎপদ রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের প্রাথমিক পর্যায়ের অন্তত সাড়ে পনের লাখ শিশুর শিক্ষাজীবন।

বর্তমান সরকারের যে সব উদ্যোগে প্রাথমিকে ঝড়ে পড়া রোধ, বাল্য বিয়ে ও শিশুশ্রম কমে গিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে, তার মধ্যে উপবৃত্তি প্রকল্প অন্যতম। গত ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষে নতুন করে চালু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা হতাশা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

রংপুর সদর উপজেলার রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া সুমি বলেন, আমাদের গরীবদের সমস্যা তো হবেই। আগে স্কুল ড্রেস পুরাতন হলে উপবৃত্তি পেয়ে নতুন ড্রেস বানাতাম, ব্যাগ কিনে নিতাম। এখন তো আর উপবৃত্তি না পেলে এসব সম্ভব হবে না।

একই বিদ্যালয়ের ছাত্র মোহসীন আলী জানান, আমাদের উপবৃত্তি বন্ধ হলে অনেক গরিব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেবে।

এদিকে অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে সংসার চালান রংপুর সদরের পালিচড়া এলাকার মসিউর রহমান। কোনো রকমে চলে তার পরিবার। তারপরও ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠান তিনি।

মসিউরের মত দরিদ্র অভাবী অভিভাবকরা বলছেন, সরকার যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি প্রকল্প বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমার মতো দিনমজুরের পক্ষে ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে না। সামান্য আয় রোজগারে তাদের পড়ালেখা চালানো অসম্ভব।

এ অবস্থায় ছাত্রছাত্রী ধরে রাখা নিয়ে উৎকণ্ঠায় শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রংপুর সদর উপজেলার রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাসিমা আখতার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, উপবৃত্তি প্রকল্পের কারণে শিশুরা স্কুলমুখী হয়েছিল। পরিবার থেকেও সন্তানদের স্কুলে পাঠানো হতো। ঝড়ে পড়ার হার, শিশুশ্রম এসব কমে গেছে। অভিভাবকরাও সচেতন হয়েছেন। এখন যদি উপবৃত্তি না থাকে, নতুন করে ভর্তি হওয়া ও শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

প্রকল্পের আওতায় গত পাঁচ বছরে এ অঞ্চলে ১৫ লাখ ২৯ হাজার প্রাথমিকের শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পেয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় উপবৃত্তি প্রকল্প চালু না হলে এর প্রভাব পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়বে, এমনটা শঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা।

শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বছর পর বছর সময় বাড়িয়েও প্রাথমিক স্কুলগুলো থেকে ড্রপ আউট বা ঝড়ে পড়া রোধ হয়নি। নিশ্চিত হয়নি সবার জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা। ফল স্বরূপ, সমাজের একটি অংশের মানুষকে এখনো বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমের অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

এদিকে প্রাথমিকে পড়ালেখায় শিশুদের উদ্বুদ্ধ করতে উপবৃত্তি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা দরকার। অন্যথায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও।

রংপুর বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক খোন্দকার মো. ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে জানান, সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে। তারপরও এ প্রকল্প বন্ধ হলে এর প্রভাব পড়বে। আমরা প্রকল্প চালু রাখতে মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছি।

তিনি বলেন, উপবৃত্তির কারণে অভাবী পরিবারের বাচ্চারা যদি মাসে তিনশ করে টাকাও পেয়ে থাকে, এতে তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো কেনা সম্ভব হয়েছে। অন্তত উপবৃত্তিটা তাদের মনে একটা তৃপ্তি জুগিয়েছে। পড়ালেখায় শিশুদের উদ্বুদ্ধ করেছে। এজন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর