ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আপত্তির মুখে রাজশাহীর পবা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় পদ্মা নদীতে খেয়া পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে বিজিবি। ফলে শহর থেকে ৪টি চরে সরাসরি যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখান থেকে অতি দরকার ছাড়া মানুষ শহরে আসছে না। কেউ অসুস্থ হলে এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে শহরের হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চরে বসবাসকারীরা।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে চরমাঝদিয়াড়ে যাওয়ার সব খেয়া বন্ধ করা হয়। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে চরখিদিরপুর, তারানগর ও নবীনগরেও খেয়া বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএসএফ দাবি করেছে- ‘ওই চারটি চরে যাতায়াত করা বাংলাদেশিরা ভারতীয় সীমান্তের ভেতর দিয়ে খেয়া নিয়ে চলাচল করছে।’
পবা উপজেলার চরখিদিরপুরের মাঝি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে চরতারানগরের বিরাট অংশ পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি সীমানা পিলারও ভেঙে পড়েছে। নদী খানিকটা ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়েছে।’
আলমগীর বলেন, ‘এবার নদীর মাঝে একটু বেশি চর পড়ার কারণে ভারতীয় সীমানার ওই জলসীমা দিয়েই এত দিন তারা খেয়া নৌকা পারাপার করেছেন। এতদিন বিএসএফ কোনো আপত্তি করেনি। কিন্তু শনিবার বিজিবির পক্ষ থেকে গ্রামে মাইকিং করে ওই এলাকা দিয়ে নৌকা না নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই এলাকা দিয়ে যেতে না পারলে সরাসরি খেয়া নৌকায় শহর থেকে চরে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই।’
খেয়ার পারাপারে বিএসএফ’র আপত্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিজিবি রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বিএসএফ আমাদের একটি পত্র দিয়ে দাবি করেছে- খেয়া নৌকা তাদের ক্যাম্পের খুব কাছ দিয়ে পারাপার করছে। তাদের জলসীমায়ও ঢুকে পড়ছে। কিন্তু তারা এটি করতে দেবে না।’
ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একেবারে ক্যাম্পের পাশ দিয়ে নৌকা যাওয়ার কারণে ওরা (বিএসএফ) একটু ভয়ও পাচ্ছে। তাদের মাঠে বাংলাদেশিদের কোনো গরু-ছাগল ছুটে গেলেও তারা ক্ষেতের ফসল খাওয়ার বিষয়েও অভিযোগ করছে। এগুলোর কারণ- বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে, আমরাও যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি।’
বিজিবি অধিনায়ক আরও বলেন, ‘যেহেতু তারা পত্র পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে, সেজন্য আমরা আপাতত খেয়ার পারাপার বন্ধ রাখার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ করেছি। বিএসএফ’র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তীতে খেয়া পারাপার চালু করতে চাইছে বিজিবি।’
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল দুই থেকে তিন মাস বিএসএফ খুব কড়াকড়ি করছে। তারা সীমান্তে ঢুকে পড়ছে এবং বাংলাদেশিদের হুটহাট জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কখনও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ভারতের মাঠে গরু-ছাগল ছুটে গেলেও কড়াকড়ি ছিল না। এখন সেটাও ঠেকাচ্ছে তারা।
জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি বিএসএফ বাংলাদেশে গোদাগাড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। প্রথম দিন বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের পর বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করে। পরদিন দুইদফা পতাকা বৈঠকের সময় পরিবর্তন করে। অবশেষে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছিল।
তবে তার আগেই পাঁচ বাংলাদেশিকে তারা থানায় সোপর্দ করেছে। এই পতাকা বৈঠকে বিজিবি মানচিত্র দেখিয়ে প্রমাণ করেছে- বিএসএফ বাংলাদেশ সীমানার ভেতর থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে গেছে। তারপরও তাদের ফেরত দেয়নি বিএসএফ। ঘটনার পর রাজশাহী সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ দু’পক্ষই ব্যাপক নজরদারি বাড়িয়েছে।